কোনো কিছুতেই মনে শান্তি নেই, আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন -জেনে নিন এর কারণ!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মন খারাপ, ক্লান্তি, উদাসীনতা—এই তিনটি শব্দ যেন আজকের দৈনন্দিন জীবনের এক নীরব সঙ্গী। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, কেন হঠাৎ করেই কিছুই ভালো লাগে না? কোনো প্রিয় গান, মুভি, খাবার এমনকি প্রিয় মানুষের সঙ্গেও মনের সংযোগ তৈরি হয় না?কেন আমাদের মস্তিষ্ক হঠাৎ করেই মনোযোগ হারায় এবং আনন্দের অনুভূতিগুলো নিঃশেষ হয়? এই অনুভূতির পেছনে লুকিয়ে রয়েছে মানসিক ও শারীরবৃত্তীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ—যা শুধু আবেগ নয়, একেবারে মস্তিষ্কের জৈবপ্রক্রিয়ার সাথেও জড়িত।
চলুন, মনোরোগ বিজ্ঞান ও শারীরবৃত্তীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করি।
মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য ও তার প্রভাব
মস্তিষ্কের মধ্যস্থ অংশে অবস্থিত নিউরোট্রান্সমিটারগুলো আমাদের মেজাজ, উদ্দীপনা ও সুখ-দুঃখের অনুভূতির মূল নিয়ন্ত্রক। ডোপামিন, সেরোটোনিন ও নরএপিনেফ্রিন এই তিনটি রাসায়নিক মস্তিষ্কের মধ্যে সুখ এবং স্নায়বিক উত্তেজনার সংকেত পৌঁছে দেয়। যেকোনো কারণে যদি এই রাসায়নিকগুলোর মাত্রা কমে যায়, তাহলে মন উদাসীন ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, ডোপামিনের অভাব মানে আমাদের মস্তিষ্কে 'পুরস্কার পেতে' ইচ্ছাশক্তি কমে যায়, যা এক ধরনের আবেগহীনতা বা মন খারাপের লক্ষণ।
স্ট্রেস এবং ঘুমের অভাব-
আজকের দ্রুতগামী জীবনে ক্রমাগত চাপ ও স্ট্রেস মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল দীর্ঘমেয়াদে হাইপোক্যাম্পাস নামক মস্তিষ্কের অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা স্মৃতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের পুনঃস্থাপনা প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা মানসিক অস্থিরতা ও অনীহা সৃষ্টি করে।
জীবনের কঠিন সময়ের প্রভাব-
ব্যক্তিগত সম্পর্কের ঝামেলা, চাকরির উদ্বেগ কিংবা আর্থিক চাপ—এসব পরিস্থিতি যখন দীর্ঘায়িত হয়, তখন আমরা সহজেই হতাশায় পড়ি। মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্য বিপর্যস্ত হয়ে যায়, ফলে আনন্দ পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে ভালো লাগার অনুভূতিতে ভাটা পড়া এক প্রকার মানসিক প্রতিক্রিয়া, যা সংকেত দেয় মনের গভীরে কিছু সমস্যা হচ্ছে।
কিছু শারীরিক কারণগুলোও কিন্তু কম দায়ী নয়-
অনেক সময় 'ভালো না লাগা' এর পেছনে শারীরিক কোনো রোগও থাকতে পারে, যা আমরা চোখে না দেখে উপেক্ষা করি। যেমন, থাইরয়েডের সমস্যা, রক্তে আয়রনের ঘাটতি, ভিটামিন বি১২ বা ডি-এর অভাব—এসব শারীরিক অবস্থার প্রভাবে আমরা ক্লান্ত ও অবসন্ন অনুভব করি। এসব অবস্থায় মানসিক অবসাদ বা অমনোযোগী মনোভাব তৈরি হতে পারে।
নিজেকে ফিরে পাওয়ার সহজ উপায়সমূহ-
১. নিয়মিত ঘুম: প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
৩. শারীরিক কার্যকলাপ: প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম ডোপামিন নিঃসরণে সাহায্য করে।
৪. সামাজিক সংযোগ: পরিবারের সদস্য, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমায়।
৫. মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: দীর্ঘস্থায়ী মন খারাপ বা উদাসীনতা থাকলে চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া জরুরি।
মনের যত্নই জীবনের প্রেরণা-
ভালো না লাগা বা উদাসীনতা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি একটি সংকেত—আমাদের মস্তিষ্ক ও মনের ভারসাম্যহীনতার একটি বার্তা। এই সংকেতকে ভালোভাবে বুঝে নিজের যত্ন নেয়া জরুরি। কারণ, মানসিক সুস্থতা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। নিজের মনের প্রতি যত্নবান হোন, যত্ন নিন, কারণ জীবন তখনই সুন্দর যখন মন খোলা থাকে।
সুত্র: মানসিক বিজ্ঞান, নিউরোবায়োলজি ও সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যের উপর ভিত্তি করে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।