মা নয় বাবাই হয় গর্ভবতী, প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে জন্ম দেয় সন্তান -জানলে চোখ উঠবে কপালে!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
জীববিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অধ্যায় খুলে দেয় সমুদ্রের নিচে থাকা এক শান্ত, ধীরগতির প্রাণী—সী হর্স। তার অসাধারণ আচরণ যেন চ্যালেঞ্জ জানায় মানুষের সমাজে প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ববোধের ধারণাকে। কারণ, প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে এই প্রাণিজগতে পুরুষই হয় গর্ভবতী, এবং সন্তান জন্ম দেয়!
প্রজনন প্রক্রিয়ার সময় স্ত্রী সী হর্স তার শরীরে তৈরি হওয়া ডিমগুলো পুরুষ সঙ্গীর শরীরের একটি বিশেষ অঙ্গ—brood pouch বা গর্ভ থলিতে স্থানান্তর করে। এই থলিটি এক ধরনের বায়োলজিক্যাল ইনকিউবেটরের মতো কাজ করে, যেখানে ডিমগুলো পুষ্টি, অক্সিজেন এবং সুরক্ষা পায়।
পুরুষ সী হর্সের দেহ তখন ঠিক গর্ভবতী নারীদেহের মতোই হরমোনজনিত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। Prolactin সহ একাধিক হরমোন সক্রিয় হয়, যা ডিমের বৃদ্ধি ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই প্রক্রিয়ায় এমনকি গর্ভস্থ বাচ্চাদের জন্য রক্তে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও সরবরাহ করা হয়।
সন্তান ফোটানোর সময় পুরুষ সী হর্স প্রকৃত অর্থেই প্রসব যন্ত্রণার মতো সংকোচনের মধ্য দিয়ে যায়। একটানা পেটের পেশি সংকুচিত করে, প্রায় ১০০ থেকে ২০০০টি ক্ষুদ্রাকৃতির সী হর্স বাচ্চা সে জলে ছেড়ে দেয়।
এই বাচ্চাগুলো জন্মের পরপরই জলের মধ্যে ভেসে বেড়াতে শেখে। তবে প্রকৃতির কঠিন বাস্তবতায় তাদের বেশিরভাগই টিকে থাকতে পারে না—শুধুমাত্র অল্প সংখ্যকই বড় হয়।
বিজ্ঞানের চোখে ব্যতিক্রম, সমাজের চোখে বার্তা-
পুরুষ সী হর্সের গর্ভধারণ বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয়। এটি শুধু একটি ব্যতিক্রম নয়, বরং প্রাণি জগতে লিঙ্গভিত্তিক আচরণের জৈবিক নমনীয়তার স্পষ্ট উদাহরণ।
মানুষের সমাজে যেখানে সন্তানধারণ একান্তভাবেই নারীর কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে সী হর্স দেখায়—সন্তান পালন, ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ—লিঙ্গ দিয়ে নির্ধারিত নয়, বরং এটি টিকে থাকার প্রয়োজনে বিবর্তনের উপহার।
সী হর্স শুধু একটি সামুদ্রিক প্রাণী নয়, বরং এটি এক জীবন্ত বার্তা বহন করে—প্রকৃতি আমাদের শিখিয়ে দেয়, পরিবর্তন মানেই অস্বাভাবিকতা নয়, বরং কখনো কখনো তা উন্নতিরই নামান্তর।
প্রাণিজগতের এই নিঃশব্দ বিপ্লব আমাদের বুঝিয়ে দেয়—যে পৃথিবী আমরা দেখি, সেটি হয়তো অনেক বড়, অনেক বিস্ময়কর, অনেক বেশি নমনীয়।
সী হর্সের এই ব্যতিক্রমী মাতৃত্ব তাই শুধুই প্রজননের কাহিনি নয়, বরং প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সাম্যবাদের এক দৃষ্টান্ত।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।