আজ ভুললেন চাবি, কাল হারাবেন স্মৃতি — আপনি কি অ্যালঝেইমারের শিকার?

আজ ভুললেন চাবি, কাল হারাবেন স্মৃতি — আপনি কি অ্যালঝেইমারের শিকার?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কে স্মৃতিশক্তির কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। হঠাৎ কোথায় চাবি রেখেছি মনে না পড়া, নাম ভুলে যাওয়া, এমনকি কখনো কখনো কথা বলতে গিয়েও শব্দ ঠিকমতো মনে না হওয়া—এসব আমরা সবাই কখনো না কখনো মুখোমুখি হয়েছি। তবে সমস্যাটা কি শুধুই 'বয়সজনিত ভুল'? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে 'অ্যালঝেইমার' নামে একটা মারাত্মক রোগ? এই দুটির মাঝে পার্থক্য বোঝা জরুরি, কারণ ভুল রোগ নির্ণয় বা অবহেলা জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।

স্মৃতিভ্রংশ— স্মৃতিভ্রংশ বলতে আমরা বুঝি মস্তিষ্কের এমন অবস্থা যেখানে স্মৃতি, চিন্তা-ভাবনা, ভাষা, বিচার-বিবেচনা এবং দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতায় ধীরে ধীরে সমস্যা শুরু হয়। এটা কোনো একক রোগ নয়, বরং বিভিন্ন কারণের ফলে সৃষ্টি হওয়া একটি সমষ্টিগত অবস্থা। যেমন- রক্ত চলাচলের ব্যাঘাত, মস্তিষ্কে আঘাত, নিউরোলজিক্যাল কিছু রোগ কিংবা অ্যালঝেইমারসহ অন্যান্য ডিমেনশিয়া। অর্থাৎ, স্মৃতিভ্রংশ হলো একটি umbrella term, যার মধ্যে বিভিন্ন রোগ থাকে।

 

অ্যালঝেইমার— অ্যালঝেইমার হলো স্মৃতিভ্রংশের সবচেয়ে সাধারণ এবং সবচেয়ে জটিল রূপ। এই রোগে মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলো ক্রমশ ধ্বংস হতে থাকে, যার ফলে স্মৃতিশক্তি, ভাষা, চিন্তা ও বিচার ক্ষমতা অনবরত কমে যায়। একে বলা হয় ধীরে ধীরে ধ্বংসাত্মক নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ। রোগের শুরুতে সাধারণ ভুলে যাওয়া আর ভবিষ্যতে জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি কাজ করা পর্যন্ত সমস্যায় ডুবে যেতে হয় রোগীকে।

 

তুলনামূলক দিকগুলো স্পষ্ট করে দেখা যাক:

☞ ভুলে যাওয়া ও স্মৃতি হ্রাস: সাধারণ বয়সজনিত স্মৃতিভ্রংশে ভুল হওয়ার পর প্রায়ই স্মৃতি ফিরে আসে, কিন্তু অ্যালঝেইমারে ভুল স্থায়ী ও ক্রমবর্ধমান।

 

☞ দৈনন্দিন জীবন: সাধারণ স্মৃতিভ্রংশে দৈনন্দিন কাজের প্রতি খুব একটা প্রভাব পড়ে না। অ্যালঝেইমারে ধীরে ধীরে হাঁটা, কথা বলা, নিজের পরিচর্যা—সবই ব্যাহত হয়।

 

☞ বুদ্ধিমত্তা ও বিচার-বিবেচনা: বয়সজনিত ভুলে বিচার-বিবেচনায় খুব একটা সমস্যা হয় না, কিন্তু অ্যালঝেইমারে চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ক্রমশ কমে যায়।

 

☞ অসাধারণ লক্ষণ: অ্যালঝেইমার আক্রান্তরা প্রায়ই পরিচিত স্থান ভুলে যান, পরিচিত মানুষ চিনতে পারেন না, একই কথা বার বার বলেন, এবং সময়ের ধারনা হারিয়ে ফেলেন।

 

বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি যে কারনে  গুরুত্বপূর্ণ-

 সঠিক রোগ নির্ণয় রোগীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অ্যালঝেইমার এখনও সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য না হলেও, সময়মতো চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে তার প্রগতি ধীর করা সম্ভব। অন্যদিকে, সাধারণ স্মৃতিভ্রংশের ক্ষেত্রে জীবনধারা পরিবর্তন, মানসিক প্রশান্তি ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী উপকার দিতে পারে।

 

সচেতনতা এবং প্রাথমিক সতর্কতা-

স্মৃতিভ্রংশ বা অ্যালঝেইমারের শুরুতেই লক্ষণগুলো চিনতে পারা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত মানসিক ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, যথেষ্ট ঘুম, সামাজিক যোগাযোগ এবং শারীরিক কার্যকলাপ মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, কোনো সন্দেহ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

 

সংক্ষেপে, স্মৃতিভ্রংশ আর অ্যালঝেইমার—এই দুই শব্দের মাঝের সূক্ষ্ম কিন্তু জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বোঝা দরকার। ভুল বোঝাবুঝি এড়িয়ে, সঠিক তথ্য ও যত্ন গ্রহণই পারে আমাদের মস্তিষ্কের সুরক্ষায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ