গর্ভাবস্থায় হাঁটা—শিশুর জন্য আশীর্বাদ নাকি বিপদঘণ্টা? বিস্ফোরক গবেষণা ফাঁস!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে শারীরিক কসরত অপরিহার্য—এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু জানেন কি, গর্ভবতী নারীদের নিয়মিত হাঁটা-চলা এবং সক্রিয় থাকার ইতিবাচক প্রভাব শুধু তাদের নয়, গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে? সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো ধরনের চিকিৎসাগত জটিলতা ছাড়া সুস্থ গর্ভবতী নারীরা যারা নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপে অংশ নেন, তাদের সন্তানদের কর্টিকাল মস্তিষ্কের পুরুত্ব (cortical thickness) বেশি হয়। কর্টিকাল পুরুত্ব হলো মস্তিষ্কের একটি সূক্ষ্ম কাঠামো, যা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, ভাষাগত দক্ষতা এবং আচরণগত বিকাশের অন্যতম পূর্বাভাস। অর্থাৎ, গর্ভাবস্থায় মা যত বেশি সক্রিয় থাকবে, তার শিশুর মস্তিষ্ক তত বেশি বিকশিত হবে।
গবেষণাটি পরিচালিত হয় ৪৪ জন গর্ভবতী মায়ের উপর, যাদের বয়স ছিল ২১ বছর বা তার বেশি এবং যারা দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করছেন। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপে মায়েদের শারীরিক কার্যকলাপ অ্যাক্সিলেরোমিটার নামে বিশেষ একটি যন্ত্র দিয়ে মাপা হয়, যা তাদের হাঁটা, চলাফেরা এবং কাজের তীব্রতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। মায়েদের দৈনিক পদক্ষেপ সংখ্যা, বিভিন্ন তীব্রতার শারীরিক কার্যকলাপের সময়, এবং সপ্তাহের বিভিন্ন দিন এই কার্যকলাপের রেকর্ড বিশ্লেষণ করা হয়।
এর পাশাপাশি, মায়েদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ও জীবনসঙ্গীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। নবজাতকের ওজন, দৈর্ঘ্য এবং জন্মকালীন শারীরিক তথ্য মেডিকেল রেকর্ড থেকে নেওয়া হয়। জন্মের মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে নবজাতকের মস্তিষ্কের MRI স্ক্যান করে কর্টিকাল পুরুত্বের নির্ভুল মান নির্ণয় করা হয়। শিশুদের MRI করার সময় তাদের স্বাভাবিক ঘুমের অবস্থা বজায় রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ফলাফল অবাক করা।
গর্ভাবস্থার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে মায়েদের হাঁটা-চলা বা মাঝারি মাত্রার শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে শিশুর মস্তিষ্কের কর্টেক্সের পুরুত্বের মধ্যে শক্তিশালী ইতিবাচক সম্পর্ক দেখা গেছে। এর মানে, সক্রিয় মায়েদের সন্তানদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও ভাষা দক্ষতা দ্রুতগতিতে বাড়ে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় সক্রিয় মায়েদের সন্তানরা ১৫ মাস বয়সেই বেশি শব্দ শিখতে পারে এবং দুই বছর বয়সের মধ্যে ভাষা বিকাশে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে।
বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি, এসব শিশুরা গাণিতিক ধারণা দ্রুত আয়ত্ত করতে পারে। মায়ের সৃজনশীলতা ও মানসিক সক্রিয়তা ভ্রূণের মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা পরবর্তী জীবনে চিন্তাশীল ও মেধাবী ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করে।
এই গবেষণার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হাঁটা-চলা শুধু মায়ের শারীরিক সুস্থতা রক্ষায় নয়, সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশে এক ধরনের 'ব্রেইন বুস্টার' হিসেবে কাজ করে। তাই গর্ভবতী নারীদের প্রতি বিশেষ আহ্বান—দিনে অন্তত কিছু সময় হাঁটুন, নড়াচড়া করুন এবং নিজের সৃজনশীল চিন্তাধারাকে সময় দিন। এটি হবে আপনার সন্তানের মেধা ও সৃষ্টিশীলতার শক্ত ভিত্তি।
সুতরাং, গর্ভাবস্থার প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশের সূক্ষ্ম স্পর্শ লুকিয়ে আছে। সক্রিয় মাতৃত্ব একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়, যার মস্তিষ্ক হয় পুরু, সক্ষম ও উদ্ভাবনী। আজকের মা, আগামী দিনের বিজ্ঞানী, শিল্পী ও চিন্তাবিদ—এমন এক সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।