নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস! প্রতিদিন যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে আপনার শরীর—জেনে নিন রক্ষার বৈজ্ঞানিক কৌশল

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস (মধুমেহ) একটি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৫৩০ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং আগামী দুই দশকে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলেছে, যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বিজ্ঞান ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সচেতনতা বাড়ালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডায়াবেটিস কী এবং কেন হয়?
ডায়াবেটিস মূলত শরীরের ইনসুলিন হরমোনের ঘাটতি বা ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা। ইনসুলিন প্যানক্রিয়াস থেকে সেক্রেট হয় যা রক্ত থেকে কোষে গ্লুকোজ প্রবেশ করায়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিসে প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যা আধুনিক জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
আধুনিক জীবনে ডায়াবেটিসের কারণ ও প্রভাব-
শহুরে জীবনের দ্রুত গতির কারণে অধিকাংশ মানুষ দৈনিক পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন না। প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত ও উচ্চ গ্লাইসেমিক খাবার, মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম, ও বসে কাজের চাপ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া ডায়াবেটিস শুধু রক্তে চিনির মাত্রাই বাড়ায় না, এটি কিডনি, হার্ট, চোখ এবং স্নায়ুতন্ত্রের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
ফলে, সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে জীবনযাত্রার গুণগত মান খুব দ্রুত খারাপ হতে পারে।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞান যা বলছে-
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে শুধু ওষুধ নয়, জীবনযাপনের পরিবর্তনই মূল কৌশল।
✔ সঠিক খাদ্যাভ্যাস: গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম এমন খাবার যেমন শাকসবজি, বাদাম, সম্পূর্ণ শস্য, ও ডাল বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। চিনিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো জরুরি।
✔ নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইকেল চালানো বা হালকা জিম ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
✔ মানসিক চাপ কমানো: দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
✔ ডিজিটাল থেরাপিউটিকস: এখন মোবাইল অ্যাপ ও স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে রোগীর খাদ্য, ব্যায়াম ও গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে ব্যক্তিগত সাপোর্ট পাওয়া যায় যা রোগীর জীবনযাত্রা সহজ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তোলে।
বাংলাদেশের জন্য করণীয় -
⇨ বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডায়াবেটিস মোকাবিলা করা সম্ভব।
⇨স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে স্বাস্থ্য শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা, যেখানে ডায়াবেটিস ও সুস্থ জীবনযাপনের উপর জোর দেওয়া হবে।
⇨ কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত বিরতি নিয়ে হাঁটা, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা।
⇨স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং কর্মসূচি চালিয়ে সময়মতো রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করা।
ভবিষ্যতের দিগন্ত
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে আরও উন্নত ও সহজ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আসছে। জেনেটিক থেরাপি, উন্নত ইনসুলিন ডেলিভারি সিস্টেম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রোগ নিরীক্ষণ ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকে আরও সহজ করবে।
তবে সর্বোপরি, সচেতনতা ও জীবনধারার পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিনি নয়, চেতনা বদলান—এই বার্তাই সবার কাছে পৌঁছানোই আজকের প্রয়োজন।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।