সবসময় হাসার নির্দেশ মানেই কি সত্যিই সুস্থতা?— 'টক্সিক পজিটিভিটি'-র সতর্ক সংকেতগুলো জানুন এখনই!

সবসময় হাসার নির্দেশ মানেই কি সত্যিই সুস্থতা?— 'টক্সিক পজিটিভিটি'-র সতর্ক সংকেতগুলো জানুন এখনই!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

পজিটিভ থাকা ভালো। কিন্তু যখন 'ভালো থাকার' আদর্শটাই রূপ নেয় আবেগ চেপে রাখার এক সামাজিক অনুশাসনে, তখন এটি হয়ে ওঠে 'Toxic Positivity'—এক ধরনের মানসিক বিকার, যা মানব মস্তিষ্কে আত্মবিরোধী সংকেত সৃষ্টি করে। গবেষকরা এখন এটিকে দেখছেন emotional invalidation, emotional suppression ও cognitive dissonance–এর জটিল ছকে।

 Toxic Positivity-র মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

১। Emotional Suppression (আবেগ দমন):

এই ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের নেতিবাচক আবেগ যেমন—কষ্ট, রাগ, ভয় বা হতাশা—প্রকাশ করতে অস্বস্তি বোধ করেন। প্রতিবারই তারা নিজের মনে বলেন,

"এই অনুভূতি গ্রহণযোগ্য নয়, আমি শুধু পজিটিভ ভাবব।"

☞   Suppressive Coping Mechanism-এর কারণে মস্তিষ্কের limbic system (বিশেষ করে amygdala) ও prefrontal cortex–এর মাঝে অসামঞ্জস্য দেখা যায়। এতে আবেগের ভারসাম্যহীনতা, irritability, emotional numbness এবং পরে anxiety বা depression দেখা দেয়।

 

 ২. Cognitive Dissonance (চিন্তাগত দ্বন্দ্ব):

ব্যক্তি বাইরের দুনিয়ায় নিজেকে পজিটিভ দেখাতে চায়, কিন্তু ভেতরে অনুভব করে কষ্ট, শূন্যতা, দুশ্চিন্তা।
এই বিরোধ থেকে জন্ম নেয় cognitive dissonance, অর্থাৎ—বিশ্বাস ও বাস্তবতার মধ্যে দ্বন্দ্ব।
 

☞ এই মনোসংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে দেখা দেয় decision paralysis, আত্মবিশ্বাসের সংকট, এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।

 

৩. Emotional Invalidation (আবেগ অগ্রাহ্যকরণ): যখন কেউ কষ্টের কথা বলে আর আশেপাশের মানুষ বলে—

"ভেবে লাভ নেই", "নেতিবাচক হইও না", "এত ডিপলি নিও না"— তখন তার আবেগ invalidation বা বাতিল হয়ে যায়। এটি একজন ব্যক্তির ভেতর emotional repression ও learned helplessness তৈরি করে—যার ফলে মানুষ অনুভব করে, "আমার অনুভূতির কোনো মূল্য নেই।"



 

 Toxic Positivity-র নিউরোবায়োলজিকাল প্রভাব:

⇨ Amygdala Hyperactivity: নেতিবাচক আবেগ চেপে রাখার ফলে অ্যামিগডালায় অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে generalized anxiety disorder (GAD)-র পথ প্রশস্ত করে।
 

 

⇨ Cortisol Overload: দীর্ঘ সময় ধরে 'মিথ্যা পজিটিভ' ভাব ধরে রাখলে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা শরীর ও মস্তিষ্কে 

 

⇨ chronic stress response ট্রিগার করে। এর ফলে হতে পারে হজমের সমস্যা, অনিদ্রা, রক্তচাপ বৃদ্ধি ও decision fatigue।
 

 

⇨ Neural Disintegration: সত্যিকারের অনুভূতি অভিব্যক্তি না পেলে মস্তিষ্কের default mode 

 

⇨ network (DMN)–এর কার্যকারিতা কমে যায়, যা আত্মজ্ঞান, স্মৃতি এবং সামাজিক সংযোগের কেন্দ্র।
 



 

পরিণতি-

১। Emotional Exhaustion (আবেগিক ক্লান্তি)
 

২। Loss of Authenticity (আত্মপরিচয়ের ভাঙন)
 

৩। Emotional Isolation (আবেগিক নিঃসঙ্গতা)
 

৪। Burnout ও Dissociation
অনেক সময় এটি উন্নত কর্মী বা "সবচেয়ে হাসিখুশি" মানুষদের মধ্যেও দেখা যায়—যারা আসলে চাপে চাপা পড়ে যাচ্ছেন।
 


 মুক্তিপথ:

 ১. Emotional Validation:

নিজের ও অন্যের আবেগকে সত্যি অনুভব করার অধিকার দিন।
উদাহরণ: "তোমার কষ্টটা বুঝি", "এই পরিস্থিতিতে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক।"

 

২. Self-compassion practice:

নিজের দুর্বলতাকেও মানবিকভাবে গ্রহণ করুন। মানুষ সব সময় হাসিখুশি থাকবে না—এটাই বাস্তবতা।

 

 ৩. Authentic Positivity:

যেখানে আশাবাদ ও বাস্তবতার ভারসাম্য থাকে। যেমন: "পরিস্থিতি কঠিন, কিন্তু আমি ধীরে ধীরে সামলে উঠব।"


Toxic Positivity মানে সব সময় হাসিখুশি থাকাই নয়—এটি একপ্রকার সাংস্কৃতিক বাধ্যবাধকতা, যা মানুষকে 'মিথ্যা শক্তি'র মুখোশ পরাতে বাধ্য করে। এতে ব্যক্তির আবেগ বিকৃত হয়, সম্পর্ক ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, আর মস্তিষ্কে জন্ম নেয় এক গভীর স্নায়বিক দ্বন্দ্ব।

সুস্থ মানসিকতা মানে সব আবেগের জায়গা দেওয়া—আনন্দ, দুঃখ, ভয়, রাগ—সবই মানুষের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা। তাই "Just be positive" নয়, বরং "Be real, be human."—এটাই হোক আমাদের নতুন মনস্তাত্ত্বিক সংস্কৃতি। আপনার অনুভূতিই আপনার পরিচয়—তাকে চেপে রাখবেন না, চেনার সুযোগ দিন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ