মস্তিষ্ক খেয়ে ফেলে যে রোগ! নারীরা কেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বজুড়ে স্মৃতিভ্রংশ রোগ অ্যালঝেইমার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তবে একটি প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে —এই রোগে নারীরা কেন পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ হারে আক্রান্ত হন?
অ্যালঝেইমার মূলত মস্তিষ্কের কোষের ধীরে ধীরে ক্ষয় ও কার্যক্ষমতা হারানোর ফল। রোগটি সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, শুধু বয়স নয়—নারীদের দেহগত ও হরমোনগত কিছু বৈশিষ্ট্য তাদেরকে এই রোগের প্রতি বেশি সংবেদনশীল করে তোলে।
একটি বড় কারণ হলো—মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় বেশি। বয়স যত বাড়ে, অ্যালঝেইমারের ঝুঁকি ততই বাড়ে। ফলে নারীরা বয়সে বেশি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় স্বভাবতই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হন। কিন্তু এই ব্যাখ্যা পুরো চিত্রটিকে ব্যাখ্যা করে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের পরিবর্তন, বিশেষত মেনোপজের সময়, মস্তিষ্কের নিউরোনের কার্যক্ষমতায় বড় প্রভাব ফেলে। এই হরমোন নিউরনকে সুরক্ষা দেয় ও স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়ায় সেই সুরক্ষা হঠাৎ কমে যায়, যা মস্তিষ্ককে অ্যালঝেইমারের মতো রোগের সামনে বেশি দুর্বল করে তোলে।
এছাড়া, জেনেটিক গবেষণায় উঠে এসেছে, APOE4 নামের একটি বিশেষ জিন নারীদের মধ্যে বেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করে, যা অ্যালঝেইমারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। পুরুষের শরীরে এই জিন থাকলেও, নারীদের মধ্যে তা অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে।
আরও একটি মনোযোগযোগ্য দিক হলো—সামাজিক ও মানসিক চাপ। বহু নারীর জীবনে গৃহস্থালি, সন্তান পালন, কর্মজীবন ও বার্ধক্যে একাকীত্ব একসাথে মিলে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ তৈরি করে। ক্রনিক স্ট্রেস মস্তিষ্কে কর্টিসল হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে নিউরনের ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈজ্ঞানিক ও জীবনধর্মী বাস্তবতাগুলোকে বুঝে আগাম সতর্কতা গ্রহণই হতে পারে নারীদের জন্য কার্যকর পথ। নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য, মানসিক প্রশান্তি এবং মেনোপজ-পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতা—এই বিষয়গুলো মিলে ঝুঁকি হ্রাসে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
অ্যালঝেইমার নারী-পুরুষ ভেদে এক বৈষম্যমূলক রোগ—এমন নয়। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব ও গতিপ্রকৃতি আলাদা রূপ নেয়, যার পেছনে রয়েছে জটিল হরমোনীয়, জেনেটিক ও সামাজিক বাস্তবতা। তাই নারীদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ গবেষণা, আলাদা প্রতিরোধ পরিকল্পনা, এবং সর্বোপরি—জ্ঞান ও সচেতনতা।
স্মৃতিভ্রংশ যেন নারীর এক নীরব শত্রু। এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে হবে সচেতনতা আর বিজ্ঞাননির্ভর জীবনের পথ বেছে নিয়ে—সময় থাকতেই।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।