গাছের শিকড়ে যে প্রকৃতির রহস্য লুকিয়ে আছে! জানলে আপনি শিউরে উঠবেন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বৃষ্টির মৌসুম এলেই ভূমিধস, নদীভাঙন কিংবা পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে শঙ্কা বাড়ে। অথচ প্রকৃতির মাঝেই লুকিয়ে আছে এক শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা—গাছের শিকড়। এ যেন নিঃশব্দে কাজ করা এক প্রকৌশলী, যিনি ভূমিকে আঁকড়ে ধরে রাখেন প্রাণপণে।
বিজ্ঞান কী বলে?
বৃক্ষের শিকড় কেবল পানি বা খনিজ শোষণ করেই ক্ষান্ত হয় না, এটি ভূমির গঠন ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞান অনুযায়ী, শিকড় মাটির গভীরে ছড়িয়ে গিয়ে একধরনের 'প্রাকৃতিক জাল' তৈরি করে, যা মাটির কণাগুলোকে একত্রে ধরে রাখে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় Soil Reinforcement বা মাটিকে শক্তিশালী করা।
বিশেষত ঝোপঝাড় ও গভীর শিকড়বিশিষ্ট গাছ (যেমন: বট, পাকুর, বাঁশ) ভূমি-ক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে। শিকড় যত বিস্তৃত হয়, ভূমিকে আঁকড়ে ধরার ক্ষমতাও তত বাড়ে।
ভূমিধস রোধে শিকড়ের প্রভাব
অতি বৃষ্টির সময় মাটি যখন জলসিক্ত হয়ে পড়ে, তখন সেটি আলগা হয়ে যায় এবং নিচে গড়িয়ে পড়ে—এটাই ভূমিধস। তবে শিকড়ের উপস্থিতি এই আলগা হওয়ার প্রক্রিয়াকে রোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাছপালাবিহীন ঢালে ভূমিধসের সম্ভাবনা ৭০-৮০% বেশি।
বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে যখন বৃক্ষচ্ছেদ ঘটে, তখন সেখানে ভূমিধসের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। গাছ কাটার ফলে শিকড় শুকিয়ে মরে যায় এবং মাটির বাঁধন শিথিল হয়ে যায়।
শুধু বড় গাছ নয়, ছোট গাছের শিকড়ও কার্যকরী-
শুধু বিশালাকৃতির গাছ নয়, গুল্ম বা ছোট উদ্ভিদের শিকড়ও ভূমি আঁকড়ে ধরার কাজ করে। তারা উপরের স্তরের মাটি ধরে রাখে, যাতে তা সহজে ক্ষয়ে না যায়। এজন্যই পাহাড়ি অঞ্চলে 'ভেজিটেটিভ কভার' বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
টেকসই শহর ও গ্রামে শিকড়ের ভূমিকা-
নগরায়নের সময় পরিকল্পনাহীন নির্মাণ কাজ এবং বৃক্ষনিধন শহরের ভৌগোলিক ভারসাম্যকে নষ্ট করছে। ফুটপাত, ড্রেন, কিংবা ঢালের পাকা নির্মাণে গাছের শিকড় কেটে ফেলা হয়, যার ফলে একদিকে গাছ মরে যায়, অন্যদিকে মাটি হয় দুর্বল।
শুধু গ্রামে নয়, শহরের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতেও পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানো হলে দীর্ঘমেয়াদে ভূমি রক্ষা পায়।
বিশ্বজুড়ে গবেষণার নজির
বিশ্বের বহু দেশে Bioengineering বা Eco-engineering পদ্ধতির অংশ হিসেবে সড়কের পাশে, বাঁধে, পাহাড়ে গাছ লাগিয়ে ভূমি রক্ষা করা হচ্ছে। শিকড়ভিত্তিক এই প্রকৌশল কর্মসূচি খরচেও সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব।
গাছের শিকড় আমাদের চোখে পড়ে না, কিন্তু ভূমিকে যেভাবে তারা আঁকড়ে ধরে রাখে, সেটাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা। তাই বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ শুধু পরিবেশের জন্য নয়, আমাদের নিজের নিরাপত্তার জন্যও অপরিহার্য।
পরিশেষে, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধানের পাশাপাশি, প্রকৃতির এই মৌলিক বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়ে ভূমি রক্ষা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় উদ্যোগ নেওয়াটাই হবে সবচেয়ে কার্যকরী পথ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।