যৌন হয়রানির শিকাররা চুপ কেন? নীরবতার পেছনের অন্ধকার জগৎ!

যৌন হয়রানির শিকাররা চুপ কেন? নীরবতার পেছনের অন্ধকার জগৎ!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্র আজ যৌন হয়রানি নিয়ে এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখোমুখি। অনেক শিক্ষার্থী এই অবৈধ ও অমানবিক ঘটনার শিকার হয়েও নিরবে থাকে—ভয়ের, অপমানের অথবা জানার অজ্ঞানতার কারণে। কিন্তু এই ভয়কে ভেঙে সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন জরুরি এবং সম্ভব।

যৌন হয়রানি কেবল শারীরিক নয়, এটি মানসিক ও মানসিক অবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য, প্রমাণ-ভিত্তিক অভিযোগ ব্যবস্থা, এবং কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা।

যৌন হয়রানি বলতে আসলে কী বোঝায়?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে 'যৌন হয়রানি' বলতে বুঝায় অবাঞ্ছিত যৌন ভাষণ, অঙ্গভঙ্গি, অবমাননাকর স্পর্শ, চাপ সৃষ্টি, হুমকি-ধমকি বা মানসিক নির্যাতন। এটি নৈতিকতা এবং আইনের উভয়েরই পরিপন্থী। বাংলাদেশের শ্রম আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, এবং সংবিধান যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।


যৌন হয়রানির শিকার হলে করণীয়: 

⇨ প্রথমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ স্থানে চলে যান। বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিবারের সদস্য, অথবা শিক্ষককে অবহিত করুন।

⇨ প্রমাণ সংরক্ষণ: অভিযোগের পক্ষে শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে ফোন কল, মেসেজ, ছবি, ভিডিও বা সাক্ষীর বিবৃতি রাখুন।

⇨ মনোবৈজ্ঞানিক সহায়তা নিন: মানসিক চাপ কমানোর জন্য পেশাদার মনোবিজ্ঞানীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।


অভিযোগ জানানোর সঠিক প্রক্রিয়া-

⇨ বিদ্যালয় ও কলেজের অভ্যন্তরীণ কমিটি: অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 'যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি' গঠিত আছে। এখানে লিখিত অভিযোগ জমা দিন।

⇨ উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে: যদি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা সার্থক না হয়, তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। বাংলাদেশ সরকার অনলাইনে অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে।

⇨ আইনি ব্যবস্থা: থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (GD) করা, এফআইআর দায়ের করা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সুযোগ রয়েছে।


অভিযোগের পর যেসব নিরাপত্তা পাবেন-

অভিযোগ করার পর প্রভাবশালী কেউ প্রতিশোধ নিতে পারে — তাই আইনি বিধান অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রক্ষা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্তরে রক্ষাকবচ ব্যবস্থা কার্যকর রাখতে হবে।

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ

১। নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি চালানো

২। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন

৩। 'সেফ স্পেস' গড়ে তোলা, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে কথা বলতে পারবে

৪। মনোবিজ্ঞানীর উপস্থিতি এবং মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা

৫। অভিযোগ গোপনীয়তা রক্ষা এবং দ্রুত তদন্ত ব্যবস্থা


কেন 'চুপ থাকা' সমাধান নয়?

যৌন হয়রানি মানে কেবল একক ঘটনা নয়, এটি শিক্ষার পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলে, যার ফলে শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই অভিযোগ করা এবং সেই অভিযোগের যথাযথ নিষ্পত্তি শিক্ষার্থীদের অধিকার।

 

সচেতনতা এবং আইনের সেতুবন্ধন- 

আইন আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন দরকার। শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানো, তাদের সুরক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়বদ্ধ করা জরুরি।

 

 যৌন হয়রানি রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব বড়। শিক্ষার্থী তথা জাতির ভবিষ্যৎ—তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আজকের সঠিক পদক্ষেপ আগামী প্রজন্মকে দেবে নিরাপদ শিক্ষার বাতিঘর।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ