ডেলিভারির নামে ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ, জেনে রাখুন ডিজিটাল প্রতারকদের কৈাশল!!

ডেলিভারির নামে ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ, জেনে রাখুন ডিজিটাল প্রতারকদের কৈাশল!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গত দশকে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত আশ্চর্যজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবল মাত্র ঢাকায়ই নয়, প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জেও মোবাইল আর ইন্টারনেটের প্রসারের কারণে ক্রেতারা এখন ঘরে বসেই যেকোনো পণ্য অর্ডার করছেন। কিন্তু এই সুবিধার সাথে নিয়ে এসেছে এক বড় সমস্যা — "প্রতারণার ভয়াবহ রূপ"।

প্রতারণার প্রকৃতি ও পদ্ধতি

বাংলাদেশে অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে 'অর্ডার দিলে পণ্য না পাওয়া', 'কম মানের পণ্য পাওয়া' বা 'অসৎ প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন'। বিশেষ করে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম প্ল্যাটফর্মে তৈরি হওয়া ছোট ছোট দোকানগুলো এই প্রতারণার বড় উৎস। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোকানগুলো এক বা দুই মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়, অর্থাৎ 'প্রি-অর্ডার' বা 'অর্ডার নিয়ে ব্যবসা বন্ধ' করে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

 

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে প্রায় ৬৫% গ্রাহক তাদের অনলাইন কেনাকাটায় এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন যা তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক আঘাতও দিয়েছে।

 

গ্রাহক সুরক্ষায় আইন ও নীতিমালার সীমাবদ্ধতা:

বাংলাদেশে ডিজিটাল কমার্স রেগুলেশন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ একেবারে নেই বললেই চলে। ই-কমার্স সাইট রেজিস্ট্রেশন করানো বাধ্যতামূলক হলেও অনেক প্রতারক ফেক তথ্য দিয়ে সাইট চালু করে গ্রাহককে ঠকাচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দ্রুততা ও কার্যকর নজরদারি না থাকার কারণে, প্রতারকরা সহজেই নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে।

 

সচেতনতা :

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রেতাদের উচিত অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠিত মার্কেটপ্লেস থেকেই কেনাকাটা করা। অজানা সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থেকে কেনাকাটায় সতর্ক থাকা এবং পেমেন্টের ক্ষেত্রে ক্যাশ অন ডেলিভারি (COD) অথবা বিশ্বস্ত পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করা উত্তম। একই সাথে, পণ্য ডেলিভারি না হলে বা মান খারাপ হলে দ্রুত ভোক্তা অধিকার সংস্থায় অভিযোগ করা জরুরি।

 

প্রতারণা রোধে যা করণীয়:

সরকারি পর্যায়ে শক্তিশালী আইন ও নিয়ম তৈরি এবং তার কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, ডিজিটাল লিটারেসি বাড়াতে প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো দরকার, যাতে সাধারণ মানুষ ই-কমার্সের সুযোগ ভালোভাবে বুঝতে পারে ও প্রতারণার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

এছাড়া, ই-কমার্স সেক্টরে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে প্ল্যাটফর্ম মালিকদের জন্য কঠোর নিয়মাবলী চালু করা প্রয়োজন। এতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

 

বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত যতই বিকশিত হোক, গ্রাহক সুরক্ষা ও প্রতারণা প্রতিরোধে প্রয়োজন বাস্তব, কার্যকর পদক্ষেপ। নয়তো ডিজিটাল বাজারে একমাত্র সুরক্ষিত ক্রেতারাই উপকৃত হবেন, আর সাধারণ মানুষ ঠকবাজদের জন্য  ঠকতেই থাকবেন। এই সঠিক দিকনির্দেশনা ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পুরোটাই অসফল হয়ে যেতে পারে।

 

তথ্যসূত্র: সরকারি ভোক্তা অধিকার রিপোর্ট, বাংলাদেশ ই-কমার্স এসোসিয়েশন, ডিজিটাল নিরাপত্তা ফোরাম। 

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ