আপনি কি ট্রমা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছেন? আপনার যা জানা প্রয়োজন

আপনি কি ট্রমা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছেন? আপনার যা জানা প্রয়োজন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

জীবনের ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা, যা চোখের সামনে বারবার ফিরে আসে, নিদ্রাহীন রাত ও উদ্বিগ্ন দিনের সঙ্গী হয়, সেটাই হলো পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD)। মানব মস্তিষ্কের গভীরে বাস করা এই মানসিক রোগটি, প্রায়শই যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, সন্ত্রাসী হামলা বা ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের পর দেখা দেয়। কিন্তু কী কারণে এমন হয়? এবং কীভাবে বোঝা যায় কারো মনে PTSD কাজ করছে?

PTSD মূলত মস্তিষ্কের স্মৃতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের অংশে ঘটে বিপর্যয়। বিশেষ করে হিপোক্যাম্পাস এবং অ্যামিগডালা নামের অংশগুলো, যা আমাদের আবেগ এবং স্মৃতির খুঁটিনাটি নিয়ন্ত্রণ করে। যখন কোনো ব্যক্তি হঠাৎ ভয়ঙ্কর ঘটনার সম্মুখীন হয়, তখন এই অংশগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে উঠে, এবং স্মৃতি মস্তিষ্কে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, তা বারবার মনে হয়। ফলে, রোগী সেই স্মৃতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, ঘুম আসে না, হঠাৎ আতঙ্কে ভুগে, এবং বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযোগ কমে যায়।

 

PTSD-এর লক্ষণগুলো অনেক রকম হতে পারে। অনেক সময় ঘুমের সমস্যার সঙ্গে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ থাকে, আবার হঠাৎ করে স্মৃতিচারণের সময় প্রচণ্ড ভয় বা রাগ দেখা দেয়। কেউ কেউ এমনকি নিজেকে বা আশেপাশের মানুষদের ক্ষতি করার প্রবণতাও দেখাতে পারে। এই অবস্থায় রোগীর দৈনন্দিন জীবন, কাজকর্ম এবং পারিবারিক সম্পর্ক মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী লাখো মানুষ এই রোগে ভুগছে, এবং এটি প্রায়ই অবহেলা করা হয়। অনেক সময় আশেপাশের মানুষ বা রোগী নিজেও বুঝতে পারে না এটি মানসিক রোগ নয়, বরং সাধারণ উদ্বেগ বা হতাশা। তাই যথাযথ চিকিৎসা ও সমর্থন না পেলে, PTSD দীর্ঘস্থায়ী এবং জীবন বদলে দেওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করে।

 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে, সাইকোথেরাপি বা কথা বলা চিকিৎসা (যেমন সিবিটি—কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি) PTSD নিরাময়ে সবচেয়ে কার্যকরী। কখনো কখনো ওষুধের সাহায্যও নেওয়া হয় উদ্বেগ ও অবসাদ কমানোর জন্য। পাশাপাশি, পরিবারের স্নেহ, বন্ধুবান্ধবের সমর্থন এবং সামাজিক সচেতনতা রোগীর সুস্থতায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেহেতু প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং সশস্ত্র দ্বন্দ্বের প্রভাব অনেকের জীবন যন্ত্রণার কারণ, তাই PTSD-এর প্রকোপও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা ও সেবা এখনও অনেকাংশে পিছিয়ে। ফলে, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় PTSD আক্রান্ত অনেক রোগী সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়।


সমাজের প্রতিটি স্তরে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো, PTSD এর লক্ষণগুলোকে বুঝে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এবং যারা আক্রান্ত তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব তৈরি করা এখন সময়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। কারণ PTSD শুধু একটি রোগ নয়, এটি জীবনের ভয়ের সাথে লড়াইয়ের গল্প—যেটা যথাযথ সহায়তা পেলে সুস্থ হতে পারে।

 

সবশেষে বলা যায়, অতীতের ভয়ঙ্কর স্মৃতির ছায়া থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়া মানেই হলো PTSD-র বিরুদ্ধে জয়লাভ। জীবন যেন আবার আনন্দময় হয়, তাই সচেতন হোন, জানুন, এবং পাশে দাঁড়ান—মানসিক স্বাস্থ্য সবসময়ই শরীরের মতোই জরুরি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ