প্রাচীনকালে রাজারা কেন গোলমরিচ ক্রীতদাসের দামে কিনতেন? অজানা ইতিহাস জেনে নিন এখনই

প্রাচীনকালে রাজারা কেন গোলমরিচ ক্রীতদাসের দামে কিনতেন? অজানা ইতিহাস জেনে নিন এখনই
  • Author, তুষার আহমেদ মূসা
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গোলমরিচ—এই ছোট্ট মসলা আমাদের রান্নার স্বাদে এনে দেয় এক অনন্য ঝাঁজ। কিন্তু এই সাধারণ মনে হলেও গোলমরিচের আছে চমকপ্রদ বৈজ্ঞানিক গুণাগুণ, যা স্বাস্থ্যের যত্ন থেকে শুরু করে রান্নার উৎকর্ষতা পর্যন্ত বিস্ময়কর ভূমিকা রাখে।

গোলমরিচ শুধু রান্নার মসলা নয়, এটি এক ধরণের প্রাকৃতিক ওষুধ। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে গোলমরিচ খেলে শরীর সুস্থ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং পাচনতন্ত্র সচল থাকে। তাই রান্নাঘরের এই ছোট্ট 'মসলা রাজা' কে ভালোভাবে চেনা এবং ব্যবহার করা আমাদের জীবনযাত্রাকে করবে আরো সুস্থ, স্বাদু এবং সতেজ।

 

তাই আজ আমরা জানব কীভাবে গোলমরিচ সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এর স্বাদ, গন্ধ ও স্বাস্থ্যগত সুবিধা সর্বোচ্চ পাওয়া যায়, এবং কিভাবে ছোট ছোট টিপস আপনার দৈনন্দিন রান্না ও জীবনযাত্রাকে আরো স্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত করে তুলবে।

 

রান্নায় গোলমরিচের সঠিক ব্যবহার:

◑ গোলমরিচের ঝাঁজ পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে রান্নার শেষে দিতে হবে। কারণ রান্নার শুরুতে পাউডার মরিচ দিলে তার ঝাঁজাল, তীব্র স্বাদ ঝরিয়ে যায়। 

◑ গোটা গোলমরিচ রান্নার ঠিক আগে বেটে নিলে তাজা স্বাদ থাকে দীর্ঘদিন। আর পাউডার মরিচের স্বাদ সাধারণত কয়েক দিনেই হ্রাস পায়, তাই নতুন করে বেটে নেওয়া সবসময় উত্তম। 

◑ মাংসের মেরিনেটে গোলমরিচ মিশিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট রাখলে প্রোটিনের আঁটসাঁটন কমে, ফলে মাংস নরম ও রসালো হয়। 

◑ রান্নায় ডিম ভাজার সময় গোলমরিচ ছিটালে প্রোটিন শোষণের ক্ষমতা বাড়ে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

 

সংরক্ষণ এবং স্টোরেজ টিপস:

⇨ গোলমরিচ দীর্ঘদিন ভালো রাখতে চাইলে এয়ারটাইট কন্টেইনারে সংরক্ষণ করা উচিত। 

⇨ গোটা গোলমরিচ ভালো অবস্থায় থাকে প্রায় ৩ বছর, কিন্তু পাউডার মরিচ দ্রুত গুণগতমান হারায়। ⇨ ফ্রিজে গোলমরিচ রাখার পরামর্শ দেয়া হয় না কারণ আর্দ্রতায় এটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

⇨ চালের মধ্যে গোলমরিচ রেখে দিলে পোকামাকড় দূরে থাকে, যা রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করে। 

⇨ এছাড়া প্লাস্টিক পাত্রের পরিবর্তে কাঁচের পাত্রে গোলমরিচ রাখলে তার স্বাদ ও গন্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়।

 

স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:

 ◑ গোলমরিচ শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। 

◑ খালি পেটে গরম পানিতে গোলমরিচ পাউডার মিশিয়ে খেলে মেটাবলিজম বাড়ে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। 

◑ দাঁতের ব্যথায় গোলমরিচ ও লবণের পেস্ট ব্যবহার করলে ব্যথা নরম হয়। 

◑ বদহজমের সমস্যায় আদার সাথে গোলমরিচ চা পান করলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। 

◑ গলা ব্যথায় গরম দুধে গোলমরিচ মেশালে শ্বাসপ্রশ্বাসে স্বস্তি আসে। 

◑ শীতকালীন সর্দি-কাশিতে মধু ও গোলমরিচের মিশ্রণ দিনে তিনবার খেলে উপশম হয়।

 

রান্নায় আরও কিছু চমকপ্রদ কৌশল:

১।  ভাত রান্নার সময় ২-৩টি গোটা গোলমরিচ দিলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। 

২। মাছের তেলে গোলমরিচ ফোড়ন দিলে তেলের দুর্গন্ধ কমে এবং খাবারের গন্ধ উন্নত হয়। 

৩। সবজি রান্নার শেষে গোলমরিচ পাউডার ছিটালে ভিটামিন সি'র পরিমাণ বেড়ে যায়। 

৪। ঝোলে গোটা গোলমরিচ দিয়ে শুরুতে ফোড়ন করলে স্বাদ বেশি বাড়ে, আর পাউডার দিয়ে শেষে ঝাঁজালত্ব দেওয়া যায়।

 

বিশেষ ও বিজ্ঞানসম্মত তথ্য:

☞ কালো গোলমরিচ সবচেয়ে ঝাঁঝালো, সাদা গোলমরিচ সুগন্ধি এবং সবুজ গোলমরিচ মৃদু স্বাদের জন্য পরিচিত।

☞ গোলমরিচের তেল বানিয়ে রান্নায় ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের উপকারিতা বজায় থাকে।

☞ হিংয়ের সঙ্গে একসঙ্গে ভাজা গোলমরিচ পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।

☞ আমের আচারে গোলমরিচ দিলে তা দীর্ঘদিন নষ্ট হয় না এবং তার প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ ক্ষমতা বাড়ে। 

☞ চিনির সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে রাখলে পিঁপড়াও দূরে থাকে।




 

সংক্ষেপে,  গোলমরিচের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ আপনাকে রান্নায় নতুন মাত্রা যোগ করবে, এবং স্বাস্থ্যের নানা দিক থেকে উপকৃত করবে। রান্নার স্বাদ ও শরীরের যত্ন—দুটি মিলিয়ে গোলমরিচ একেবারে অপরিহার্য।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ