মাথা কাজ করছে ধীরে? এই অভ্যাসগুলো মেনে চললেই মস্তিষ্ক হবে AI থেকেও স্মার্ট!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমাদের মস্তিষ্ক, যা একদিকে অদ্ভুত এক যন্ত্র, অন্যদিকে অসীম সম্ভাবনার ভাণ্ডার। প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরনের জটিল যোগাযোগের মাধ্যমে এটি পরিচালনা করে আমাদের চিন্তা, অনুভূতি ও সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই মহাবিশ্বের মতো বিস্তৃত ক্ষমতাটাই আমরা অধিকাংশ সময় পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারি না। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিদিনের কিছু সহজ অভ্যাসের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি মানসিক সতর্কতা ও স্মৃতিশক্তি অনেকটাই উন্নত হয়।
➤ ঘুম মস্তিষ্কের নিজস্ব রিচার্জ :
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টার গভীর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ঘুম মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে। বিশেষ করে ঘুমের 'র্যাপিড আই মুভমেন্ট' (REM) পর্যায়ে মস্তিষ্ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলোকে শক্তভাবে মেমোরিতে স্থির করে। ঘুমের অভাব হলে মনোযোগ কমে যায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় এবং মানসিক চাপ বেড়ে যায়।
➤ শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়
শারীরিক কর্মশক্তি বাড়ালে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়, যা মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা যোগব্যায়াম যেমন দেহকে সুস্থ রাখে, তেমনি মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলো সক্রিয় ও তরতর করে তোলে।
➤ নতুন শেখার জোরালো শক্তি: নিউরোপ্লাস্টিসিটি
ব্রেইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নিউরোপ্লাস্টিসিটি — নিজের গঠন এবং কার্যক্ষমতা বদলানোর ক্ষমতা। নতুন ভাষা শেখা, বই পড়া , বা অন্য কোনো সৃজনশীল কাজে নিজেকে যুক্ত করা নিউরনগুলোর মধ্যে নতুন সংযোগ তৈরি করে, যা চিন্তা ও সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
➤ পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস: মস্তিষ্কের জন্য উপযুক্ত ইন্ধন
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন সালমন, আখরোট, এবং ফ্ল্যাক্সসিড মস্তিষ্কের কোষ সুরক্ষা ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, ব্লুবেরি, ডার্ক চকলেট, সবুজ শাক-সবজি প্রভৃতি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের বার্ধক্য ধীর করে। অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার মস্তিষ্কের কোষে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়।
➤ মানসিক প্রশান্তি: ধ্যান ও মাইন্ডফুলনেস
প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিটের ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, বা মাইন্ডফুলনেস ব্রেইনের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল কমিয়ে দেয়। এটি ব্রেইনের 'প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স' অংশকে উদ্দীপ্ত করে, যা মনোযোগ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
➤ ডিজিটাল ডিটক্স: মানসিক ক্লান্তি থেকে মুক্তি
ব্রেইন সময় সময় বিশ্রাম চায়। দিনের মধ্যে কিছু সময় স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা টিভি থেকে দূরে থাকা মস্তিষ্ককে পুনরায় ফোকাস করতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
➤ পর্যাপ্ত পানি পান:
আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫ শতাংশই পানি। জলশূন্যতা ব্রেইনের কার্যক্ষমতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে, যার ফলে মনোযোগ কমে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।
-এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করে তুলতে পারে আরও বেশি ফলপ্রসূ ও সফল। তাই আজ থেকেই শুরু করুন মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া, কারণ স্বাস্থ্যবান মস্তিষ্কই সত্যিকারের শক্তি।
সংক্ষেপে, মস্তিষ্ক হলো মানব শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জটিল অঙ্গ। এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে আমাদের প্রয়োজন সঠিক ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার, মানসিক প্রশান্তি ও ডিজিটাল বিশ্রাম।
বিজ্ঞান বুঝিয়ে দিয়েছে—সঠিক অভ্যাস মেনে চললেই আপনার মস্তিষ্ক হবে আরও স্মার্ট, আরও ফোকাসড এবং আরও শক্তিশালী।
আপনার মস্তিষ্ককে দিন নতুন দিনের নতুন শক্তি, কারণ সঠিক যত্নেই ভর করে ভবিষ্যত।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।