ডিজিটাল সড়ক না ডিজিটাল ধোঁকা? বাস্তবতা দেখে চমকে যাবেন!

ডিজিটাল সড়ক না ডিজিটাল ধোঁকা? বাস্তবতা দেখে চমকে যাবেন!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়ন লক্ষ্য ও ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' এখন শুধু একটি স্বপ্ন নয়, বরং জাতীয় অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই স্বপ্ন পূরণে সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। কারণ দেশের দৈনন্দিন জীবনের মূল চাকা এখানেই ঘোরে—যেখানে যানজট, দুর্ঘটনা, সময় ও অর্থের অপচয় প্রতিনিয়ত নাস্তা করছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার সড়কগুলো কতটা 'স্মার্ট'? আমাদের বাস্তব অবস্থা কী, আর প্রযুক্তির ব্যবহার কতটুকু সফল?

বিশ্বব্যাপী শহরগুলোতে যেমন 'ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম' ব্যবহার করা হয়, সেখানে রিয়েল টাইম ট্রাফিক মনিটরিং, স্মার্ট সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ, স্মার্ট ক্যামেরা ও সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে যানজট ও দুর্ঘটনা হ্রাস করা হয়। বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তির দিকে ধীরে ধীরে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ইতোমধ্যে ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিগন্যাল ও সেন্সর বসানো হয়েছে যা যানবাহনের ঘনত্ব অনুযায়ী লাইট পরিবর্তন করে যানজট কমাতে সাহায্য করে।

 

গণপরিবহনে ডিজিটাল পদক্ষেপ

পরিবহনে আধুনিকীকরণে কিছু রুটে চালু হয়েছে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা, যা যাত্রীদের জন্য স্বচ্ছতা ও সহজতা বাড়িয়েছে। তবে এখনও অধিকাংশ বাস-ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডিজিটাল নয়, ফলে যাত্রী তথ্য ও চলাচল নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনের অভাব সড়কে 'স্মার্টনেস' আনার পথে বড় বাধা।

 

নিরাপত্তায় স্মার্ট প্রযুক্তি—প্রয়োজনীয়তা ও চ্যালেঞ্জ:

স্মার্ট সড়কের সবচেয়ে বড় দিক হলো নিরাপত্তা। যদিও শহরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো শুরু হয়েছে, তবুও যাত্রী সুরক্ষা, দুর্ঘটনা রোধে তা পর্যাপ্ত নয়। ক্যামেরার তথ্য বিশ্লেষণ ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজন দক্ষ ও আধুনিক আইটি সিস্টেম। দুর্ঘটনা সনাক্তকরণ ও জরুরি সাড়া ব্যবস্থা এখনো অনেক ক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি পরিচালিত, যা সময় ও জীবন দুটোই নষ্ট করে।

 

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে 'স্মার্ট সড়ক'-

একটি সড়ককে 'স্মার্ট' বলা যায় যদি সেটি তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিকের চাপ নিরীক্ষণ করে, পরিবহন ও যাত্রীদের জন্য কার্যকর তথ্য সরবরাহ করে, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে এবং পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমায়। বাংলাদেশে এই ধারণা এখনো শুধুমাত্র পরিকল্পনা পর্যায়ে বা সীমিত স্থানে বাস্তবায়িত। দেশে সেন্সর ও ক্যামেরা ভিত্তিক বিশ্লেষণ কম, রিয়েল টাইম ডেটা সংগ্রহের সক্ষমতা সীমিত, আর ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা এখনও বেশ দূরে।

 

প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ

১. প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর ঘাটতি: উন্নত সেন্সর, ক্যামেরা ও আইওটি (IoT) ডিভাইসের যথাযথ স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ নেই।

২. মানব সম্পদের অভাব: দক্ষ প্রযুক্তিবিদ ও অপারেটর সীমিত, ফলে সিস্টেম পরিচালনায় সমস্যা।

৩. অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা: উন্নত প্রযুক্তির ব্যয় অনেক, এবং দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশি।

৪. জনসচেতনতার অভাব: প্রযুক্তি ব্যবহারে জনসাধারণের সচেতনতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন, যা এখনো কম।

 

আগামী দিনের দিকনির্দেশনা

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুততার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে:

⇨ পূর্ণাঙ্গ রিয়েল টাইম ট্রাফিক মনিটরিং ও বিশ্লেষণ কেন্দ্র স্থাপন,

⇨ ডিজিটাল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিস্তার,

⇨ স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থাপনা যেখানে বাস, মেট্রোসহ সকল গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে,

এবং

⇨ জনগণকে প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করানো ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া।


স্মার্ট সড়কের মাধুর্য শুধু আধুনিক যন্ত্রপাতি নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহার ও মানুষের অংশগ্রহণের সমন্বয়ে সড়কযাত্রাকে নিরাপদ, দ্রুত ও পরিবেশবান্ধব করা। বাংলাদেশের 'স্মার্ট সড়ক' এখনো সে পর্যায়ে আসেনি যেখানে আমরা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি—আমাদের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্মার্ট! তবে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুস্পষ্ট, প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে গেলে 'স্মার্ট বাংলাদেশ'র স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে আর কোনও দিন দূরত্ব থাকবে না।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ