শিশুদের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার সাইকোলজিক্যাল ট্রিকস!

শিশুদের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার সাইকোলজিক্যাল ট্রিকস!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ—তাদের হাতে যদি বই তুলে দেওয়া না যায়, তবে তারা চিন্তা করতে শিখবে না, প্রশ্ন তুলবে না, উত্তর খুঁজবে না। কিন্তু সমস্যা এখানেই—ডিজিটাল যুগে শিশুরা বইয়ের পাতার চেয়ে বেশি আকৃষ্ট থাকে স্ক্রিনের ঝলকানিতে। এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠে—কীভাবে তৈরি করবো শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস? আর সময় ব্যবস্থাপনাই বা কতটা জরুরি এতে?

যেকারণে সময় ব্যবস্থাপনা  এত গুরুত্বপূর্ণ -

বই পড়া একটি মানসিক অভ্যাস—এটি এক দিনে গড়ে ওঠে না। শিশুদের মস্তিষ্ক অভ্যাস তৈরি করতে চায় ধারাবাহিকতা ও পূর্বনির্ধারিত রুটিনের মাধ্যমে। তাই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া শিশুদের ব্রেইনে এক ধরনের 'আভ্যন্তরীণ ঘড়ি' তৈরি করে দেয়, যা ধীরে ধীরে বই পড়াকে তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করে।

উদাহরণস্বরূপ: – প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৭টা ২০ মিনিট পর্যন্ত শুধুই বই পড়ার সময়। – খাবার বা ঘুমের মতোই এই সময়টাও হয়ে উঠবে 'অপরিহার্য'।


 মনস্তত্ত্ব অনুযায়ী যেভাবে  গড়ে উঠবে অভ্যাস-

শিশুরা শেখে 'অভিজ্ঞতা' থেকে, আদেশ নয়। তাই বই পড়া যদি একটি 'উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা' হয়, তবেই সে অভ্যাস গড়ে উঠবে। 

✔ চিত্তাকর্ষক গল্প, রঙিন পাতা, প্রশ্নোত্তর পর্ব—সবই হতে পারে আকর্ষণের মাধ্যম। 

✔  শিশুর পছন্দ মতো বই তাকে নির্বাচন করতে দিন—এতে তার নিজের 'অধিকার' বোধ তৈরি হবে। 

✔  বই পড়ে সে যা শিখেছে তা নিয়ে কথা বলুন—তাতে সে অনুভব করবে, বই পড়ার গুরুত্ব আছে।



 

 'পাঠকোণ'—ঘরেই গড়ে তুলুন বই পড়ার পরিবেশ

গবেষণায় বলা হয়েছে, শিশুদের শেখার জন্য পরিবেশ একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। 

✪  একটি ঘরের কোণে ছোট্ট করে তৈরি করুন 'reading corner'। 

✪  রাখুন ছবি সম্বলিত গল্পের বই, শিক্ষণীয় বই বা ভাষা শেখার বই। 

✪  সেখানে বসে তার সঙ্গে বই পড়ুন। এটা শিশুর মস্তিষ্কে আনন্দ ও নিরাপত্তার বার্তা পাঠায়—যা পাঠাভ্যাস গঠনের জন্য খুবই কার্যকর।


 ডিজিটাল মাধ্যম: শত্রু নয়, সহায়ক বানান

বই মানেই কাগজের বই—এই ধারণা এখন বদলাচ্ছে। শিশুদের জন্য সহজবোধ্য অডিওবুক, এনিমেটেড ই-বুক বা ইন্টারঅ্যাকটিভ অ্যাপের মাধ্যমেও পাঠাভ্যাস তৈরি হতে পারে, যদি ব্যবহৃত হয় ঠিকভাবে।

 তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: 

✘ অযাচিত কনটেন্ট যেন না আসে, 

✔ অভিভাবকের পর্যবেক্ষণ যেন থাকে, 

✔ সময় যেন থাকে সীমিত।



 

 অভিভাবকের ভূমিকা: আপনি নিজেই যদি উদাহরণ হন..!! 

শিশুরা যা দেখে, তাই অনুকরণ করে। যদি একজন মা বা বাবা বই নিয়ে বসে, শিশু স্বাভাবিকভাবে আগ্রহ পায় বইয়ের প্রতি। 

✔ একসঙ্গে গল্প পড়া, 

✔ ছুটির দিনে 'বই উৎসব' আয়োজন, 

✔ অথবা বই উপহার দেওয়া—সবই হতে পারে বইয়ের সঙ্গে শিশুর বন্ধুত্ব গড়ার কৌশল।


✪  টিপস:

⇨ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন বই পড়ার জন্য।

⇨ শিশুর পছন্দকে প্রাধান্য দিন।

⇨পরিবেশ তৈরি করুন—শান্ত ও আকর্ষণীয়।

⇨ সৃজনশীল আলোচনা করুন বইয়ের বিষয় নিয়ে।

⇨ নিজেই হোন বইপ্রেমী—তাই-ই হবে তার শেখার উৎস।


 উপসংহার:

শিশুদের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি করা কোনো তাৎক্ষণিক ফলের কাজ নয়। এটি হলো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, যা ধীরে ধীরে একজন চিন্তাশীল, মেধাবী, আত্মবিশ্বাসী মানুষ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।

শুধু সময় দিলেই হবে না, দিতে হবে ঠিক সময়টুকু—সুপরিকল্পিত, সজাগ এবং সহানুভূতিশীলভাবে।

 

"স্ক্রিনের বদলে যদি পাতায় মন দেয় শিশু—তবেই গড়ে উঠবে আগামী দিনের আলোকিত নাগরিক"

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ