বুকে জ্বালাপোড়ার অজানা কারণ — আজ থেকেই সচেতন হোন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সময় - দুপুর ২টা। খাবার খেয়েছেন মাত্র আধাঘণ্টা আগে। হঠাৎই বুকের মাঝ বরাবর জ্বালা শুরু হলো। মনে হচ্ছে গলা বেয়ে আগুন উঠে আসছে—এমন অনুভূতির নামই 'হার্টবার্ন'। অথচ এটি হার্ট বা হৃদপিণ্ডের সমস্যা নয়, বরং একেবারে আলাদা ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (পরিপাকতন্ত্র) ঘরানার একটি সমস্যা। আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো হার্টবার্ন কী, কেন হয়, কখন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং কিভাবে আপনি নিজেকে এই অস্বস্তিকর সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারেন।
হার্টবার্ন মানে কি সত্যিই হৃদপিণ্ডে সমস্যা?
না, একেবারেই না। 'Heartburn' নাম শুনে অনেকেই ভুলভাবে ধরে নেন এটি হৃদরোগের কোনো লক্ষণ। বাস্তবে এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্সের উপসর্গ। খাদ্যনালির নিচে একটি গোলাকৃতি পেশি রয়েছে, যাকে বলে Lower Esophageal Sphincter (LES)। এটি এমনভাবে কাজ করে যেন পাকস্থলীর অ্যাসিড ও খাবার ওপরের দিকে উঠে না আসে। কিন্তু যখন এই পেশিটি দুর্বল হয়ে পড়ে বা ভুল সময়ে খোলে, তখন পাকস্থলীর অ্যাসিড ফিরে আসে খাদ্যনালিতে। তখনই বুক জ্বালার অনুভূতি হয়, যাকে আমরা বলি "হার্টবার্ন"।
উপসর্গ :
হার্টবার্নের সময় নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে—
১। বুকের মাঝখানে জ্বালাপোড়া বা পোড়ার মতো অনুভব
২। গলা বা মুখের দিকে টক স্বাদ উঠে আসা
৩। বুক ভারী বা চেপে ধরা অনুভূতি
৪। শোয়ার সময় বা রাতে উপসর্গ আরও বাড়া
কাশি, গলা খুসখুসে ভাব বা গলায় আটকে থাকার অনুভূতি
কেন হয় হার্টবার্ন?
হার্টবার্ন হঠাৎ হয় না—এর পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে।
সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণগুলো হলো:
☞ খাবার সম্পর্কিত কারণ:
অতিরিক্ত ঝাল, তেল, ভাজাভুজি
অতিরিক্ত চা, কফি, চকোলেট
টমেটো, সাইট্রাস ফল (লেবু, কমলা)
কোল্ড ড্রিংকস ও অতিরিক্ত প্রোটিনজাত খাবার
☞ জীবনযাত্রাজনিত কারণ:
একবারে বেশি খাওয়া, খাবার খেয়েই শুয়ে পড়া, ধূমপান ও অ্যালকোহল, বেশি ওজন বা স্থূলতা, অতিরিক্ত স্ট্রেস বা টেনশন, খুব টাইট জামাকাপড় পরা
☞ শারীরিক অবস্থা:
গর্ভাবস্থা, হরমোনের তারতম্য, পেটের ভিতরে চাপ বৃদ্ধি
কতটা বিপদজনক!
সাময়িক হলে হার্টবার্ন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যদি এটি বারবার হয়, তাহলে এর মানে হতে পারে আপনি গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)-এ আক্রান্ত। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এটি ধীরে ধীরে ইসোফেজাইটিস, আলসার, এমনকি বারেটস ইসোফাগাস নামক বিপজ্জনক অবস্থা এবং খাদ্যনালির ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়: কী করবেন, কী এড়াবেন
✔ প্রতিদিন অন্তত ২০–৩০ মিনিট হেঁটে চলাফেরা করুন
✔ একবারে কম করে, দিনে বারবার খাওয়া অভ্যাস করুন
✔ তেল-মশলাযুক্ত খাবার কমান, বিশেষ করে রাতে
✔ বালিশ উঁচু করে ঘুমান, বিশেষ করে যদি রাতের বেলা হার্টবার্ন হয়
✔ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
✔ ধূমপান, চা-কফি, কার্বোনেটেড পানীয় কমান
✘ খাবারের পরে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না
✘ অতিরিক্ত টাইট পোশাক এড়িয়ে চলুন
✘ খাওয়ার ঠিক আগে-পরে পানি পান না করাই ভালো
✘ মানসিক চাপ থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম করুন
কখন চিকিৎসা নেবেন?
নিম্নোক্ত উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন:
⇨ প্রতিদিন হার্টবার্ন অনুভব করা
⇨ গলা বা বুকের মধ্যে খাবার আটকে থাকার অনুভূতি
⇨ রক্ত বমি বা কালো পায়খানা
⇨ হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
⇨ ঘন ঘন গলা ব্যথা, কাশি বা গলার স্বর পরিবর্তন
গবেষণা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় (বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান অঞ্চলে) ১০-২০% মানুষ নিয়মিত হার্টবার্নে ভোগে। শহরাঞ্চলে এটি বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ফাস্টফুড, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও স্ট্রেস বাড়ার কারণে হার্টবার্নের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
হার্টবার্ন কোনো হালকা সমস্যা নয়—এটি একদিকে যেমন অস্বস্তিকর, অন্যদিকে নিয়মিত হলে হতে পারে ভয়াবহ কিছু রোগের পূর্বসঙ্কেত। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া জরুরি। আপনার খাবার, অভ্যাস আর জীবনধারার ছোট ছোট পরিবর্তনই দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি স্বস্তি।
স্বাস্থ্যই ভবিষ্যৎ—আর সুস্থ অভ্যাসই তার সেরা রক্ষাকবচ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।