আপনি কি বাচ্চার বারবার রেগে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত ? - এখনি জেনে নিন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ছোট্ট একটা শিশু হঠাৎ করে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, কাঁদছে, চিৎকার করছে, হয়তো জিনিস ছুঁড়ে ফেলছে—এই দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। বাবা-মায়ের চোখে এই আচরণ হয়তো 'অতিরিক্ত জেদ' মনে হতে পারে। কিন্তু এই আচরণের পেছনে রয়েছে শিশুমনের গভীর এক সংকেত—এটা হচ্ছে "ট্যানট্রাম", যা একদমই স্বাভাবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ এক মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়।
ট্যানট্রাম কী? কেন হয়?
ট্যানট্রাম মূলত এক ধরণের আবেগীয় বিস্ফোরণ। সাধারণত ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুরা তাদের চাওয়া-পাওয়ার ভাষাগত প্রকাশে সীমাবদ্ধ থাকে। যখন তারা কথা বলে নিজেদের অনুভূতি ঠিকভাবে বুঝাতে পারে না, তখন তারা বেছে নেয় শরীরী ভাষা—চিৎকার, কান্না, মাটিতে শোয়া, জিনিস ছুঁড়ে ফেলা ইত্যাদি।
বিজ্ঞান যা বলে-
শিশুর মস্তিষ্কের 'অ্যামিগডালা' অংশ খুব দ্রুত উত্তেজিত হয়, আর 'প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স'—যেটা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে—এখনও পুরোপুরি পরিপক্ব নয়। ফলে, আবেগ জেগে উঠলেও সেটাকে যুক্তি দিয়ে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা তাদের থাকে না। এটাই ট্যানট্রামের প্রধান কারণ।
শিশুর জন্য ট্যানট্রাম কতটা স্বাভাবিক?
বিশ্বজুড়ে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে—প্রায় ৮০% শিশু ১.৫ থেকে ৩ বছর বয়সে নিয়মিত ট্যানট্রামের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়। এটা কোনো মানসিক সমস্যা নয়। বরং এটি একটি 'ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন'। যদি শিশু ট্যানট্রামের মাধ্যমে নিজের অনুভব প্রকাশ করতে পারে, তবে মানসিকভাবে সে আরও সচেতন হয়ে ওঠে।
কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন?
ধৈর্য, সহানুভূতি ও কৌশল—এই তিনটি হলো সেরা প্রতিক্রিয়া।
✘ যা করা উচিত নয়:
⇨ শিশুকে ধমকানো বা মারধর করা
⇨ তাকে লজ্জা দেওয়া
⇨ তার সামনে নিজেই উত্তেজিত হওয়া
✔ বরং যা করবেন:
⇨ চুপচাপ শিশুর পাশে থাকুন
⇨ কোমল কণ্ঠে বলুন, "তুমি কষ্ট পাচ্ছো বুঝতে পারছি।"
⇨ তার দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা করুন
⇨ নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করুন, যাতে সে জানে কখন কী করা উচিত
টিপস:
✔ পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
✔ শিশুকে সময় দিন এবং মনোযোগ দিন
✔ নিয়মিত খাবার খেতে দিন—ক্ষুধা থাকলেও ট্যানট্রাম বাড়ে
✔ পছন্দের কাজ বেছে নেওয়ার সুযোগ দিন
✔ সহজ ভাষায় অনুভূতি বোঝাতে শেখান, যেমন "আমি রেগে গেছি" বলা
ট্যানট্রাম কি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ?
না—যদি পিতামাতা সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেন। কিন্তু যদি ট্যানট্রামকে বারবার দমন করা হয়, শিশুর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। সে তার আবেগ বোঝাতে ভয় পেতে শেখে, ফলে ভবিষ্যতে সামাজিক সমস্যায় ভুগতে পারে।
তবে, যদি শিশুর ট্যানট্রাম খুব ঘন ঘন হয়, এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, নিজে বা অন্যকে আঘাত করে, তাহলে শিশুর বিকাশগত দিক পর্যবেক্ষণ করা দরকার হতে পারে।
শেষ কথা,
ট্যানট্রাম কোনো "দুষ্টুমি" নয়, বরং শিশুর মনের ভেতর চলা এক দ্বন্দ্বের চিৎকার। এটা শোনা দরকার, বোঝা দরকার। শিশুকে সুশৃঙ্খল মানুষ বানাতে চাইলে, তার আবেগ বোঝার ভিত তৈরি করতেই হবে।
কারণ, আবেগ বোঝার শুরুটা হয় এই ট্যানট্রামের মেঘলা বিকেলে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।