ফ্যারাওর অভিশাপ নয়, এবার ফ্যারাওর গিফট! মৃত্যুর ছত্রাক এখন জীবন রক্ষার হাতিয়ার!

ফ্যারাওর অভিশাপ নয়, এবার ফ্যারাওর গিফট! মৃত্যুর ছত্রাক এখন জীবন রক্ষার হাতিয়ার!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মিশরের প্রাচীন ইতিহাসের একটি রহস্য আজো মানবতার জন্য আলোফোটা সম্ভাবনার উৎস হয়ে উঠেছে। তুতানখামেনের কবর একসময় ছিল মৃত্যুর মহাসংকেত। যারা এই কবরের ভেতরে প্রবেশ করত, অজানা এক অভিশাপের কারণে একের পর এক মৃত্যু হয় বলে বিশ্বাস ছিল যুগ যুগ ধরে। 'ফ্যারাও-এর অভিশাপ' নামেই পরিচিত এই ভয়ংকর কাহিনী।

কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান এই বিশ্বাসকে খণ্ডন করেছে। দেখা গেছে, মৃত্যুর পিছনে ছিল Aspergillus flavus নামের একধরনের ছত্রাক। এই ছত্রাকের স্পোর বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং যখন কারো শরীরের ফুসফুসে প্রবেশ করে, বিশেষ করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, তখন তা মারাত্মক সংক্রমণ সৃষ্টি করে—যা বলা হয় অ্যাসপারজিলোসিস। এই সংক্রমণ অনেক সময় প্রাণঘাতী প্রমাণিত হয়।

 

তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, আজ সেই একই ছত্রাক বিজ্ঞানীদের কাছে হয়ে উঠেছে আশার আলো। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার একদল গবেষক পেয়েছেন এই ছত্রাকের ভেতরে এমন এক ধরনের পেপটাইড, যার নাম অ্যাসপেরিজাইমিসিন (Asperigimycin)। পেপটাইড হল প্রোটিনের ছোট ছোট খণ্ড যা কোষের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অপরিহার্য।

 

এই পেপটাইডের উৎপত্তি ঘটে কোষের প্রোটিন নির্মাণ কেন্দ্রে—রাইবোজোমে। এরপর এটি শরীরের ভেতরে বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত (মডিফাইড) হয়ে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। 

গবেষণায় দেখা গেছে, এই পরিবর্তিত অ্যাসপেরিজাইমিসিন ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে কার্যকর, বিশেষত রক্তের ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া চিকিৎসায় সম্ভাবনা রয়েছে।

 

এই শক্তিশালী পেপটাইডকে আলাদা করে নিতে হলে লাগে অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ্ম রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যার মধ্যে অন্যতম হলো লিপিডেশন — একটি প্রক্রিয়া যা পেপটাইডের গঠন ও গুণগত মান বদলে দেয়। এর ফলে পেপটাইড শরীরের ভেতরে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন ধরনের বিষাক্ত ছত্রাকের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে আরও অনেক প্রাকৃতিক যৌগ, যেগুলো ভবিষ্যতের নতুন ওষুধ হিসেবে আবিষ্কৃত হতে পারে। এই আবিষ্কার একদিকে যেমন পুরনো ভয়কে নিরস্ত করে, অন্যদিকে তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

সুতরাং, সেই কালের 'অভিশপ্ত' ছত্রাক আজ মানবজাতির জন্য নয়া 'জীবনদাতা' হিসেবে পরিচিত হতে যাচ্ছে। বিজ্ঞান আর প্রকৃতির এই অদ্ভুত মেলবন্ধনই হয়তো ভবিষ্যতের ক্যান্সার চিকিৎসায় বিপ্লবের পথ খুলে দেবে।

পুরনো ভয়কে অতিক্রম করে আজ 'ফ্যারাও'র অভিশাপ থেকে জন্ম নিচ্ছে নতুন জীবন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ