মানসিক চাপ কীভাবে ভেঙে দিচ্ছে আপনার শরীরের প্রতিটি কোষ? বিস্ময়কর তথ্য এখানে!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চাপ ও উদ্বেগ একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মস্থলের চাপ, আর্থিক সংকট, পারিবারিক দায়িত্ব—কিন্তু এই চিন্তাগুলো যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে বারবার মাথায় ঘোরে, তখন তা আর সাধারণ দুশ্চিন্তা থাকে না। একে বলা হয় দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ বা ক্রনিক স্ট্রেস। এটি শরীর ও মনের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা জটিল সমস্যার জন্ম দেয়।
মানবদেহে এই চাপের সরাসরি প্রভাব পড়ে হরমোন ভারসাম্যের ওপর। চাপের সময় মস্তিষ্ক থেকে কর্টিসল নামক এক বিশেষ হরমোন নিঃসৃত হয়, যার কাজ হলো শরীরকে সতর্ক রাখা। স্বল্পমেয়াদে এটা উপকারী হলেও, কর্টিসলের মাত্রা যদি দীর্ঘদিন ধরে বেশি থাকে, তবে শুরু হয় বিপদ।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কর্টিসল বেশি থাকার ফলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়, যেমন এসিডিটি, বদহজম, অথবা খাবার ভালোভাবে পাচিত হয় না। সঙ্গে গা ও পেশিতে ব্যথা, ক্রমাগত মাথাব্যথা, ঘুমের গোলমাল এবং অবসাদের লক্ষণ দেখা দেয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে সর্দি-জ্বর, ইনফেকশনসহ নানা অসুখ সহজেই শরীরে বাসা বাঁধে।
এ ছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদি কর্টিসল উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা সময়ের সঙ্গে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
শারীরিক বিপদ ছাড়াও মানসিক চাপ মানুষের আচরণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকে চাপ সামলাতে গিয়ে অতিরিক্ত খাওয়া, ধূমপান, অ্যালকোহল বা অন্যান্য নেশাদ্রব্যের অভ্যাসে ডুবে যান, যা আবার শরীরের ওপর আরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে মানসিক চাপ ও শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে এক ভয়ংকর চক্র তৈরি হয়, যা
ভাঙতে কঠিন।
তবে, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ পুরোপুরি বন্ধ নয়। নিয়মিত মেডিটেশন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, প্রয়োজন হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা বা কাউন্সেলিং নেওয়া যেতে পারে। ছোট ছোট পরিবর্তন যেমন প্রতিদিন একটু সময় প্রকৃতির মাঝে কাটানো, মোবাইল-কম্পিউটার থেকে বিরতি নেওয়া ইত্যাদিও মানসিক শান্তি দিতে সাহায্য করে।
অতএব, মানসিক চাপকে হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। এটি একটি ধীরগতির শত্রু, যা চুপিসারে আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্ক দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই নিজেকে বুঝুন, সময় নিন, এবং আপনার মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। কারণ সুস্থ মনেই রয়েছে সুস্থ দেহের গোপন চাবিকাঠি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।