জীবন আর অজীবনের সীমানায় লুকানো Sukunaarchaeum এর রহস্যময় কাহিনি!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমাদের পরিচিত জীবজগতে প্রাণী বলতে এমন সত্তাকে বোঝানো হয়, যা নিজ থেকে খাবার তৈরি করতে পারে, বাড়ে, এবং বংশবৃদ্ধি করে। আবার ভাইরাসের মতো কিছু সত্তা আছে, যেগুলো জীবনের এই সাধারণ সংজ্ঞায় ফিট হয় না। তারা নিজে বেঁচে থাকতে পারে না, নিজস্ব বৃদ্ধি বা শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতাও রাখে না। তবে যখন এরা জীবন্ত কোষে প্রবেশ করে, তখন জীবনের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয় এবং ভয়ঙ্কর রোগের কারণ হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে জীব এবং অজীবের মধ্যবর্তী এমন এক অদ্ভুত সত্তার খোঁজে ছিলেন — যেটি ভাইরাস এবং জীবের সীমারেখাকে অস্পষ্ট করে।
সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া গেল এমনই এক প্রাণী, যার নাম Sukunaarchaeum mirabile। এটি Archaea নামে পরিচিত এক প্রাচীন জীবনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যা পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং সরলতম জীবগুলোর মধ্যে একটি। গবেষকরা জানাচ্ছেন, Sukunaarchaeum শুধুমাত্র একটি অদ্ভুত নামই নয়, এটি জীববিজ্ঞানে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এই প্রাণীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর জৈবিক গঠন ও কার্যক্রম। সাধারণ ভাইরাসের মতো Sukunaarchaeum নিজে থেকে শক্তি উৎপাদন বা খাদ্য হজম করতে পারে না, তাই এটি অন্য জীবের কোষের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভাইরাস থেকে আলাদা, এর মধ্যে রয়েছে নিজস্ব রিবোসোম এবং মেসেঞ্জার RNA তৈরির জিন, যা প্রাণীর প্রোটিন উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এই জিনগুলো ভাইরাসের মধ্যে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, Sukunaarchaeum নিজে নিজে প্রোটিন বানানোর সক্ষমতা রাখে — যা ভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ও জটিল।
তবে এই জীবটির জিনোম অত্যন্ত ক্ষুদ্র, মাত্র ২,৩৮,০০০ বেস পেয়ার। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় জিন শুধুমাত্র নিজেদের DNA কপি এবং বংশবৃদ্ধি করার জন্য। শক্তি উৎপাদন কিংবা খাদ্য পচনের জন্য প্রয়োজনীয় কোন জিন নেই। এ কারণেই এটি এক ধরনের 'প্যারাসাইটিক' জীবন যাপন করে, অর্থাৎ অন্য জীবের ওপর নির্ভরশীল।
এই Sukunaarchaeum mirabile প্রথম আবিষ্কার করা হয় কানাডা ও জাপানের যৌথ গবেষক দলের মাধ্যমে, যারা সমুদ্রের প্ল্যাঙ্কটন নমুনায় এর অস্তিত্ব শনাক্ত করেন। পরবর্তী গবেষণায় নিশ্চিত হয় এটি Archaea গোষ্ঠীর অংশ, যা জীবের অতি প্রাচীন এবং মৌলিক শাখা।
এই আবিষ্কার জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পথে এক মাইলফলক। জীব এবং অজীবের মাঝখানে অবস্থান করা
Sukunaarchaeum আমাদের জীবন সম্পর্কে ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে। এটি প্রমাণ করে, জীবের সংজ্ঞা এত সহজ নয়, বরং তা আরও জটিল এবং বর্ণিল।
এ ধরনের প্রাণীর গবেষণা থেকে আমরা জীবনের উৎপত্তি, বিবর্তন এবং প্রাণীর জীববৈচিত্র্যের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচনের প্রত্যাশা করতে পারি। Sukunaarchaeum mirabile হচ্ছে সেই প্রাণী, যা জীব ও অজীবের সীমানায় থাকা রহস্যময় 'মধ্যবর্তী জগতের' এক আকর্ষণীয় পরিচায়ক।
এই আবিষ্কার বিজ্ঞানের দিগন্ত প্রসারিত করেছে, যা আগামী দিনের গবেষকদের জন্য অসীম সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। জীববিজ্ঞানে আগ্রহী সবাই এই অদ্ভুত এবং রহস্যময় জীবটির ওপর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলবেন, যা ভবিষ্যতের জীববৈচিত্র্যের ধারণাকেও পাল্টে দিতে সক্ষম।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।