সবচেয়ে বিশ্বাস যার উপর, তার কাছ থেকেই কেন আসে প্রতারণা? মনস্তত্ত্ব বলছে চমকে দেওয়া সত্য!

সবচেয়ে বিশ্বাস যার উপর, তার কাছ থেকেই কেন আসে প্রতারণা? মনস্তত্ত্ব বলছে চমকে দেওয়া সত্য!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানব জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলো কখনো কখনো এমন এক দুর্ভাগ্যজনক প্রতারণার সম্মুখীন হয়, যা আমাদের মানসিক অস্থিরতা ও আস্থা ভেঙে দেয়। আত্মীয় কিংবা প্রিয়জনের কাছে প্রতারণা শুধুমাত্র বিশ্বাসঘাতকতা নয়, এটি মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও আবেগীয় একটি জটিল প্রক্রিয়ার ফল। তাহলে কেন ঘটে এই ঘৃণ্য প্রতারণা? কেনই বা কেউ তার সবচেয়ে কাছের মানুষের প্রতি এমন এক বিশ্বাসঘাতকতার পথ বেছে নেয়?

প্রতারণার পেছনে রয়েছে মস্তিষ্কের জটিল আবেগ ও মনস্তাত্ত্বিক মিশ্রণ-

প্রথমত, ব্যক্তির আত্মসম্মানহীনতা বা নিম্ন আত্মপরিচয় প্রতারণার অন্যতম কারণ হতে পারে। যখন কেউ নিজের মধ্যে অপ্রতুলতা বা নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করে, তখন সে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অন্যের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। এ ছাড়াও, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং জীবনের নানা দ্বন্দ্ব অনেক সময় মানুষের বিচারের ক্ষমতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়, যার ফলশ্রুতিতে সম্পর্কের অবমূল্যায়ন ঘটতে পারে।

 

দ্বিতীয়ত, যোগাযোগের অভাব প্রতারণার অন্যতম প্রধান কারণ। আত্মীয়-প্রিয়জনের মধ্যে যদি স্পষ্ট ও সৎ যোগাযোগ না থাকে, তবে ভুল বোঝাবুঝি এবং অবিশ্বাসের জন্ম নেয়। দীর্ঘকালীন গোপনীয়তা বা অনুভূতির প্রকাশে ব্যর্থতা সম্পর্কের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয় এবং অবশেষে কোনো একটি পক্ষের পক্ষপাতিত্ব বা প্রতারণার দিকে ঠেলে দেয়।

 

তৃতীয়ত, কগনিটিভ ডিসোন্যান্স বা মানসিক দ্বন্দ্বও প্রতারণার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। যখন কেউ নিজের কর্ম এবং নিজের নৈতিক মূল্যবোধের মধ্যে বিরোধ অনুভব করে, তখন সে নিজের কাজকে যৌক্তিক করার জন্য মস্তিষ্কে নানা ধরনের যুক্তি বা অজুহাত তৈরি করে। এই মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া তাকে আত্মীয় বা প্রিয়জনের সাথে প্রতারণা করলেও নিজেকে নির্দোষ মনে করায়।

 

বিজ্ঞানমনস্ক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কখনো কখনো প্রতারণা আসে মনস্তাত্ত্বিক প্রতিশোধ বা 'রিভেঞ্জ বাইয়াস' থেকে, যেখানে কেউ অতীতের কোনো আঘাতের জবাবে তার ক্ষতিপূরণ নিতে চেষ্টা করে। এর পাশাপাশি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা মানসিক একাকিত্বও প্রতারণার প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে। কারণ যখন একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করে, তখন সে অন্যকে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয় এবং অবিশ্বাসের দিকে ধাবিত হয়।

 

সুতরাং, আত্মীয়-প্রিয়জনের প্রতারণা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্ব নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগের সমষ্টিগত ফলাফল। এই বিষয়গুলো গভীরভাবে বোঝা এবং সম্পর্কের মধ্যে খোলামেলা ও নিয়মিত কথোপকথন বৃদ্ধি করাই হলো প্রতারণার ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

 

পরিশেষে, সম্পর্কের ভিত গড়ে তোলা যায় বিশ্বাস, সম্মান এবং পারস্পরিক সমর্থনের মাধ্যমে। তাই যখন আত্মীয়-প্রিয়জনের কাছ থেকে প্রতারণার ঘটনা ঘটে, তখন শুধু অপরাধীর প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে তার অন্তরজগত ও মানসিক অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করাও জরুরি। কারণ, প্রতারণার অন্তর্নিহিত কারণগুলো বোঝা মানেই সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ