মাথা ঘোরে? দুর্বল লাগে?—পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে বিপজ্জনক সিস্টেম ফেইলিওর!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকি। কিন্তু ঠিক তার উল্টো – হাইপোটেনশন, অর্থাৎ রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কমে যাওয়াও শরীরের জন্য হতে পারে এক নীরব বিপদ। অনেক সময় এটি অসুস্থতার শুরু বা ভেতরে চলা কোন জটিল সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।
হাইপোটেনশন আসলে কী?
রক্তচাপ মূলত দুইটি সংখ্যায় পরিমাপ করা হয় –
১. সিস্টোলিক (উপরের সংখ্যা): হৃদয় যখন সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে।
২. ডায়াস্টোলিক (নিচের সংখ্যা): হৃদয় যখন বিশ্রামে থাকে।
যখন এই সংখ্যা ৯০/৬০ মিমি এইচজি-র নিচে নেমে যায়, তখন তাকে হাইপোটেনশন বলা হয়। কিন্তু শুধু সংখ্যা নয়, তার পেছনের প্রক্রিয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরে রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণ :
নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে সাময়িক অথবা দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণত নিচের কারণগুলো এর জন্য দায়ী—
☞ পানির ঘাটতি (ডিহাইড্রেশন): শরীরের পানিশূন্যতা রক্তের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তচাপ পড়ে যায়।
☞ রক্তাল্পতা বা রক্তক্ষরণ: অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক রক্তক্ষরণ হঠাৎ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
☞ হৃদযন্ত্রের সমস্যা: হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে না পারলে শরীর জুড়ে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়।
☞ নিউরোলজিক্যাল কারণ: অটোনোমাস নার্ভ সিস্টেমের অসামঞ্জস্যতা (যা রক্তনালীর সংকোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে) রক্তচাপে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
☞ হরমোনের সমস্যা: যেমন অ্যাড্রিনাল হরমোন বা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি।
☞ ঔষধের প্রভাব: কিছু প্রেসক্রিপশন ওষুধ, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ বা মনোরোগের ওষুধ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
লক্ষণ যেগুলো অবহেলা করা ঠিক নয়:
☞ মাথা ঘোরা বা অন্ধকার দেখা
☞ অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা
☞ বুক ধড়ফড় করা
☞ শ্বাসকষ্ট
☞ মনোযোগে ঘাটতি বা ধোঁয়াশা
☞ ঠান্ডা ও বিবর্ণ ত্বক
☞ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে তা সাময়িক মনে হলেও, বারবার ঘটলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কেন বিপজ্জনক?
হাইপোটেনশন যদি নিয়মিত হয়, তবে তা শরীরের কোষে পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন না পৌঁছানোর ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদপিণ্ড যদি পর্যাপ্ত রক্ত না পায়, তবে দীর্ঘমেয়াদে অঙ্গহানির সম্ভাবনাও তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এটি স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিউর, এমনকি হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
প্রতিরোধ ও সচেতনতা :
⇨ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন
⇨ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বা হঠাৎ উঠে দাঁড়ানোর সময় সতর্ক থাকুন
⇨ খাবারে পর্যাপ্ত লবণ ও খনিজ উপাদান রাখুন (বিশেষ করে যারা বেশি ঘামান)
⇨ নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ
⇨ দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন
বিজ্ঞান যা বলছে -
বর্তমানে আধুনিক মেডিকেল গবেষণায় দেখা গেছে, অটোনোমিক নিউরোপ্যাথি, হরমোনাল ডিসফাংশন এবং জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্যও হাইপোটেনশনের সঙ্গে জড়িত। নতুন প্রযুক্তি যেমন ওয়্যারেবল ব্লাড প্রেসার মনিটর ও সেন্সর এখন রক্তচাপ পরিবর্তন দ্রুত ধরতে পারে, যার ফলে ঝুঁকি এড়ানো আরও সহজ হচ্ছে।
হাইপোটেনশনকে অবহেলা না করে, এটিকে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখা উচিত। এই নিঃশব্দ সংকেত আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যদি আমরা তা সঠিক সময়ে বুঝতে পারি। নিয়মিত রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ, জীবনযাপনের সঠিক পদ্ধতি এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণই হতে পারে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।