একই ক্ষত! কিন্তু পশু শুকায় ৩ দিনে, মানুষ ৯ দিনে— জেনে নিন কি এমন রহস্য রয়েছে এর পেছনে!!

একই ক্ষত! কিন্তু পশু শুকায় ৩ দিনে, মানুষ ৯ দিনে—  জেনে নিন কি এমন রহস্য  রয়েছে এর পেছনে!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষের দেহে ক্ষত শুকাতে সময় লাগে অন্য অনেক প্রাণীর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, একই ধরনের ক্ষতের নিরাময়ে মানুষের শরীর শিম্পাঞ্জি বা বনোবোর তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি সময় নেয়। এই ধীরগতির আরোগ্যের রহস্য এখনো সম্পূর্ণভাবে উদঘাটিত হয়নি, তবে এটি আমাদের বিবর্তনের ইতিহাস ও শারীরবৃত্তীয় গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করছে।

ক্ষত আরোগ্যের প্রক্রিয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে প্রায় একই রকম। ক্ষত হলে প্রথম ধাপে রক্ত জমাট বাঁধে যা রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। এরপর শরীরের প্রতিরোধকারী কোষ ক্ষতস্থানে এসে জীবাণু নাশন করে এবং মৃত কোষগুলো পরিষ্কার করে। এরপর কোলাজেন নামক প্রোটিন তৈরি হয়, যা ক্ষতস্থলকে নতুন টিস্যু দিয়ে পূরণ করে। পাশাপাশি নতুন রক্তনালী গড়ে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত ত্বকের ক্ষত ঢেকে যায়।

কিন্তু কেন মানুষের এই প্রক্রিয়া অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় এতটা ধীর?

গবেষকরা বলছেন, ইঁদুর, বিড়াল, ঘোড়া এবং অন্যান্য কিছু প্রাণী "wound contraction" নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে দ্রুত ক্ষত সারায়। এই পদ্ধতিতে ক্ষতস্থল দ্রুত সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে নিরাময়ের সময় অনেক কমে যায়। কিন্তু মানুষের শরীরে এ পদ্ধতিটি সীমিত মাত্রায় কাজ করে, ফলে ক্ষত শুকানোর সময় বেড়ে যায়।

 

এই গবেষণাটি জাপান এবং কেনিয়ার ল্যাবরেটরিতে সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বানর, শিম্পাঞ্জি, ইঁদুর এবং মানুষের ক্ষত আরোগ্যের সময় তুলনা করা হয়। ফলাফল স্পষ্ট—সব নন-হিউম্যান প্রাইমেট এবং ছোট স্তন্যপায়ীদের আরোগ্যকাল প্রায় একই, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে তিনগুণ বেশি সময় লাগে।

 

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, মানুষের পূর্বপুরুষরা বিবর্তনের এক পর্যায়ে দ্রুত ক্ষত নিরাময়ের ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। সম্ভবত এই ধীরগতির আরোগ্য আমাদের শরীরের অন্যান্য জটিলতাকে বজায় রাখতে সাহায্য করে, যেমন মস্তিষ্কের বিকাশ এবং দীর্ঘায়ু। ধীর আরোগ্য হওয়া শারীরবৃত্তীয় ভারসাম্যের অংশ হতে পারে, যা দ্রুত আরোগ্যের চেয়ে বেশি উপকারী ছিল আমাদের প্রজাতির জন্য।

 

তবে এই বিষয়ে আরও গভীর জ্ঞানার্জনের জন্য গবেষকরা জেনেটিক, কোষীয় এবং প্রাচীন কঙ্কাল বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। এসব গবেষণা আমাদের মানব দেহের জটিলতার আরও দিক উন্মোচন করবে এবং জীববিজ্ঞানের মহাজাগতিক বিবর্তনের গল্পের নতুন অধ্যায় যোগ করবে।

 

মানুষের ধীর আরোগ্যের এই রহস্য কেবল একটি বায়োলজিক্যাল তথ্য নয়, এটি আমাদের নিজস্ব শারীরিক ইতিহাস, বিবর্তনের প্রভাব এবং জীববৈচিত্র্যের গভীর বিশ্লেষণ। এই জ্ঞানে আমরা মানুষের শরীর ও তার দুর্বলতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারব, যা ভবিষ্যতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিশা দেখাতে পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ