এক-এগারো (১/১১) কি? জানুন বিস্তারিত

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় “১/১১” (এক এগারো)। এই দিন বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক সংকট ও সহিংসতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সমর্থনে একটি জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
১/১১-র পটভূমি ছিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্ব, সহিংসতা, অবিশ্বাস ও দুর্নীতির বিস্তার। ২০০৬ সালের শেষদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে দেখা দেয় তীব্র রাজনৈতিক অচলাবস্থা। একদিকে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলীয় জোট, অন্যদিকে বিএনপি এবং চার দলীয় জোট মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে পূর্বনির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন বাতিল করে ক্ষমতায় আসে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার প্রধান ছিলেন সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ।
এই সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, রাজনৈতিক সংস্কার এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনের নামে বহু রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করে। শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া—উভয় নেত্রীকেও আটক করা হয়। এমনকি "রাজনৈতিক দলহীন গণতন্ত্র" বা "সিভিলিয়ন রাষ্ট্র" গঠনের ধারণাও আলোচনায় আসে। তবে এই সরকারের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা এবং গণতন্ত্রের বাইরে থাকা অবস্থান নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেয়।
দুই বছরেরও বেশি সময় পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার পুনরায় গঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করে ক্ষমতায় আসে।
১/১১ কেবল একটি তারিখ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনীতির জটিলতা, প্রতিষ্ঠানগত দুর্বলতা এবং নাগরিক অধিকার হরণ ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের এক স্মারক হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই সময় দেশের বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং গণমাধ্যমের ওপর প্রভাব ফেলার নজির স্থাপন করে।
বর্তমানে ১/১১ নিয়ে বিতর্ক, আলোচনা ও স্মৃতিচারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ এটিকে একান্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন, আবার কেউ একে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করেন।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।