রেডিও টেলিস্কোপে ধরা পড়লো এক অন্য জগতের ডাক!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আকাশে তাকালেই আমরা দেখি তারাভরা বিশাল এক নীরব মহাকাশ। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে—এই নীরবতা একধরনের ভ্রম। কারণ, মহাবিশ্ব নীরব নয়; বরং এটি প্রতিনিয়ত কথা বলে, শুধুমাত্র তা শোনা যায় না সাধারণ চোখে দেখা আলোয়। আর এই অদৃশ্য কথোপকথনের শ্রবণযন্ত্র হলো রেডিও টেলিস্কোপ। এই যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে লাখ-লাখ আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্র, কৃষ্ণগহ্বর, ছায়াপথ এমনকি বিগ ব্যাংয়েরও চিহ্ন খুঁজে পান। কীভাবে? উত্তর লুকিয়ে আছে রেডিও তরঙ্গের গভীর বিশ্লেষণে।
রেডিও টেলিস্কোপ যেভাবে কাজ করে:
রেডিও টেলিস্কোপ সাধারণ আলো নয়, 'রেডিও তরঙ্গ' নামে পরিচিত একধরনের বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় তরঙ্গ শনাক্ত করে। এই তরঙ্গ মহাবিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে ছড়িয়ে আসে—
যেমন:
⇨ মৃত নক্ষত্র (পালসার)
⇨ ছায়াপথের কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বর
⇨ গ্যাসীয় মেঘ বা নিঃসরণীয় নেবুলা
⇨ এমনকি বিগ ব্যাংয়ের পর সৃষ্টি হওয়া ব্যাকগ্রাউন্ড বিকিরণ
একটি রেডিও টেলিস্কোপ মূলত একটি বিশাল থালার মতো অ্যান্টেনা, যা দুর্বল রেডিও সংকেত সংগ্রহ করে। এই সংকেত রিসিভারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সিগনালে রূপান্তরিত হয় এবং পরে সুপারকম্পিউটারে বিশ্লেষণ করা হয়। এভাবেই তৈরি হয় একেকটি ছবি বা তরঙ্গ বিশ্লেষণ প্রতিবেদন—যা আমাদের বলে দেয়, মহাকাশে কী ঘটছে।
যে ধরনের তথ্য মেলে এই তরঙ্গ থেকে:
রেডিও তরঙ্গ বিশ্লেষণ বিজ্ঞানের এক পরিশীলিত শাখা, যার মাধ্যমে জানা যায়—
⇨ কোনো তারকা মারা যাচ্ছে নাকি জন্ম নিচ্ছে?
⇨ কোনো গ্যালাক্সি কতদূর রয়েছে এবং কীভাবে গতিশীল?
⇨ ব্ল্যাক হোল কীভাবে আশপাশের পদার্থ গ্রাস করছে?
⇨ বিগ ব্যাং-এর প্রমাণ হিসেবে কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন কেমন ছিল?
⇨ এমনকি, কোথাও প্রাণের সম্ভাবনা আছে কি না, সেটারও ইঙ্গিত পাওয়া সম্ভব!
বিশ্বের নানা গবেষণাগারে পাওয়া 'ফাস্ট রেডিও বার্স্ট' বা FRB এখনো এক রহস্য। হঠাৎ করে আসা এই অতীব শক্তিশালী রেডিও সিগন্যালগুলো কোথা থেকে আসছে, তা নিয়েই চলছে বিশ্লেষণ।
রেডিও তরঙ্গের বাস্তব ব্যবহার:
রেডিও টেলিস্কোপ শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য নয়, এর বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তি ব্যবহার হয় বহু খাতে—
১। স্যাটেলাইট যোগাযোগে
২। আবহাওয়া পূর্বাভাসে
৩। নভোচারী অভিযান পরিচালনায়
৪। ডেটা ট্র্যাকিং ও মহাকাশীয় রাডার সিগন্যাল বিশ্লেষণে
৫। এমনকি রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি-এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সৌরঝড়ের পূর্বাভাসও পাওয়া সম্ভব, যা আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষা করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা -
বাংলাদেশ এখনো বড় আকারে রেডিও টেলিস্কোপ স্থাপন করেনি, তবে উন্নত বিশ্বে এ খাতে বিপুল কর্মসংস্থান ও গবেষণার সুযোগ তৈরি হয়েছে। STEM শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি হতে পারে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথ। প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও একাডেমিক গবেষণার সংযুক্তি।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ এমন প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণায় বিপ্লব এনেছে। বাংলাদেশ চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র রেডিও টেলিস্কোপ প্রকল্প হাতে নিতে পারে—যা পরবর্তীতে গবেষণার বড় ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
শেষ কথা: আলো সব বলে না, অনেক কিছুই আলোয় আড়াল থাকে। রেডিও টেলিস্কোপ আমাদের শেখায়, শোনা যায় এমন অনেক কিছুই—যা দেখা যায় না। এই প্রযুক্তি শুধু মহাকাশ দেখার নয়, বরং তা বোঝার, অনুধাবনের এবং প্রমাণ খোঁজার এক নিখুঁত মাধ্যম। পৃথিবীর বাইরে, বহু দূরের কেউ হয়তো আমাদেরই কোনো বার্তা পাঠাচ্ছে—তাই মহাবিশ্বের নীরবতার মাঝেও কান খোলা রাখা এখন বিজ্ঞানের দায়িত্ব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।