রিজেকশন সেনসিটিভিটি ডিসফোরিয়ার লক্ষণ গুলো মিলিয়ে দেখুন—আপনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে কি না এই নিঃশব্দ ব্যাধি!

রিজেকশন সেনসিটিভিটি ডিসফোরিয়ার লক্ষণ গুলো মিলিয়ে দেখুন—আপনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে কি না এই নিঃশব্দ ব্যাধি!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানব জীবনে প্রত্যাখ্যান বা উপেক্ষা পাওয়ার যন্ত্রণা সবাই অনুভব করেন। তবে কারো জন্য এটি শুধু মানসিক অস্বস্তি নয়, বরং এক প্রকার মানসিক সংকট, যার নাম রিজেকশন সেনসিটিভিটি ডিসফোরিয়া (RSD)। যারা এই অবস্থায় ভুগছেন, তাদের জন্য সমাজের সামান্য সমালোচনাও কখনো কখনো অবর্ণনীয় যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

RSD হলো এমন এক আবেগগত প্রতিক্রিয়া, যেখানে প্রত্যাখ্যানের সম্ভাবনা টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক প্রকার তীব্র মানসিক চাপ ও কষ্ট অনুভূত হয়। সাধারণ মানুষের তুলনায়, আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই 'অস্বীকৃতি' থেকে অনেক বেশি বেদনাদায়ক অনুভূতি লাভ করেন, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার গতি বাধাগ্রস্ত করে।


গবেষণায় দেখা গেছে, RSD আক্রান্তদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা নামক অংশটি অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটি আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, এবং প্রত্যাখ্যান বা সমালোচনার সম্ভাবনা দেখলে তা 'আক্রমণাত্মক সংকেত' দেয়। পাশাপাশি, মস্তিষ্কের সামনের অংশ, যা চিন্তা ও আবেগ সামলাতে সাহায্য করে, তা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে, সংবেদনশীল ব্যক্তিরা নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন।

 

বিশেষ করে ADHD আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই অবস্থা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কারণ তাদের মস্তিষ্কের এই আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা অন্যান্যদের তুলনায় বেশ ভিন্নভাবে কাজ করে।


যাদের  জীবনে RSD-এর প্রভাব বেশি-

⇨ ADHD আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে RSD-এর মাত্রা তুলনামূলক বেশি।
 

⇨ এমন লোক যারা শৈশবে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন বা মানসিক ট্রমার শিকার ছিলেন।
 

⇨ সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া বা নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া মানুষেরা।
 

⇨ বিশেষ করে কিশোর এবং তরুণরা যাদের আবেগগত সংবেদনশীলতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
 

 

RSD জীবনে যেভাবে প্রভাব ফেলে-

এই মানসিক অবস্থা শুধু আবেগকে নয়, ব্যক্তির কাজের দক্ষতা ও সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। প্রত্যাখ্যানের ভয় এতটাই তীব্র হয় যে, অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেকে একাকী করে ফেলে বা নিজেকে নিচু চোখে দেখতে শুরু করেন। এর ফলে পেশাগত এবং সামাজিক জীবনে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।


সমাধান ও মোকাবেলার উপায়:

রিজেকশন সেনসিটিভিটি ডিসফোরিয়া থেকে মুক্তির পথ রয়েছে। 

প্রথম ধাপ হলো নিজের আবেগ ও অনুভূতিকে সনাক্ত করা এবং বুঝতে পারা।

এরপর কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT)-এর মতো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

সর্বোপরি, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলাও এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


রিজেকশন সেনসিটিভিটি ডিসফোরিয়া মনের এক অদৃশ্য ক্ষত, যা সহজে ধরা পড়ে না কিন্তু তীব্রতা ও প্রভাব অনেক গভীর। এই অবস্থার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে আক্রান্তরা তাদের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যেও সহায়তা পায় এবং সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে। মানব মস্তিষ্কের জটিলতা ও সংবেদনশীলতাকে বুঝে, আমরা মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ