সমুদ্রের বুকে শহর বানানোর ঝুঁকি নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া—জানুন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আর ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা—বিশ্ব যখন দিশেহারা, তখন দক্ষিণ কোরিয়া গ্রহণ করেছে এক সাহসী পদক্ষেপ। তারা গড়ে তুলছে বিশ্বের প্রথম ভাসমান শহর (floating city)। প্রকল্পটির নাম: Oceanix Busan। এটি শুধুই ভবিষ্যতের বিজ্ঞান কল্পকাহিনি নয়—বরং বাস্তবের মাটিতে (বা বলা ভালো, পানিতে) দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে এক সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বসবাসযোগ্য নগর।
যেকারণে ভাসমান শহর -
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী উপকূলবর্তী শহরগুলোর প্রায় ৯০ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে পড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও ভূমি ক্ষয়ের কারণে এই বিপদের মুখে পড়েছে বিশ্বের বহু শহর। ঠিক এই সংকটের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাতিসংঘের সমর্থিত প্রতিষ্ঠান OCEANIX হাতে নেয় এমন এক প্রকল্প, যা ভবিষ্যতের টেকসই নগর পরিকল্পনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
Oceanix Busan, কেমন হবে এই ভাসমান শহর??
এই শহর নির্মিত হচ্ছে বাসান (Busan) শহরের উপকূলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী:
⇨ শহরটি গঠিত হবে তিনটি আন্তঃসংযুক্ত ভাসমান প্ল্যাটফর্মে
⇨ প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে থাকবে বসতবাড়ি, খোলা বাজার, অফিস ও কমিউনিটি সেন্টার
⇨ সর্বোচ্চ ১২,০০০ মানুষের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করা হবে
⇨ শহর চলবে পর্যাপ্ত সৌরশক্তি এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে
⇨ মজবুত ভাসমান কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে এমনভাবে, যাতে তা ১০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড়, সুনামি ও বন্যার চাপ সহ্য করতে পারে
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে নির্মাণ:
এই ভাসমান শহর কেবল অভিনব ধারণাই নয়, এর পেছনে রয়েছে অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও পরিবেশবান্ধব ডিজাইনের সমন্বয়:
⇨ বাঁশ এবং বায়ো-ভিত্তিক কংক্রিট ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে নির্মাণ কম কার্বন নিঃসরণ করে
⇨ জল পরিশোধন প্রযুক্তি থাকছে, যা সমুদ্রের পানি পরিশুদ্ধ করে ব্যবহারযোগ্য করে তুলবে
⇨ প্রতিটি ইউনিটে থাকবে বর্জ্য রিসাইক্লিং ও জল-নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, যা শহরটিকে একেবারে জিরো-ওয়েস্ট কমিউনিটিতে রূপান্তরিত করবে
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই প্রকল্প কি আসলেই ভবিষ্যতের কার্যকর সমাধান, নাকি কেবল একটি উচ্চাভিলাষী প্রযুক্তিগত পরীক্ষা?
সমালোচকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ও অর্থনৈতিক বৈষম্য সমাধানে এমন প্রকল্পগুলি এখনো সীমিত পরিসরে। আবার অনেকেই মনে করছেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শুরু, যা ভবিষ্যতের নগর উন্নয়নে বাস্তব সমাধান দিতে পারে।
বিশ্বের আগ্রহ বাড়ছে!
Oceanix Busan প্রকল্প এখন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডস, মালদ্বীপ, ও দুবাইয়ের মতো দেশগুলোও নিজেদের ভাসমান স্থাপত্য পরিকল্পনা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
একটা সময় যে ধারণা ছিল সায়েন্স ফিকশন—আজ তা বাস্তব হয়ে উঠছে দক্ষিণ কোরিয়ার হাত ধরে। Oceanix Busan যদি সফল হয়, তাহলে এটি হতে পারে উপকূলবর্তী মানুষের জন্য একটি ভবিষ্যতনির্ভর, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প।
প্রকৃতির বিরুদ্ধে নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করেই যদি আগামীর শহর গড়ে তোলা যায়—তবে এই ভাসমান শহর হয়তো আর কল্পনা নয়, বরং আমাদের বাঁচার বাস্তব পথ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।