আক্কেল দাঁত উঠছে? চিকিৎসা না নিলে যা হতে পারে, ভাবলেও শিউরে উঠবেন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আক্কেল দাঁত (তৃতীয় মোলার) থেকে উদ্ভূত ব্যথা আজকাল অনেকেরই জীবনে একটি পরিচিত সমস্যা। এটি শুধু দাঁতের ব্যথা নয়, বরং মুখ, মাথা, কানে, গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে নানা ধরণের জটিলতার সূত্রপাত হতে পারে।
আক্কেল দাঁত: সংজ্ঞা ও ভূমিকা
আক্কেল দাঁত হলো মানুষের তৃতীয় মোলার দাঁত, যা সাধারণত ১৭-২৫ বছর বয়সের মধ্যে মুখে উঠে আসে। প্রাচীন মানবজাতির জন্য এই দাঁত ছিল কঠিন খাদ্য যেমন কাঁচা শাক-সবজি, গোশত বা শক্ত খাবার চিবানোর জন্য অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমানে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে এই দাঁতের ভূমিকা অনেকাংশে কমে গেছে।
ব্যথার কারণগুলো :
১. অপর্যাপ্ত জায়গা (স্পেস লিমিটেশন):
মুখের চোয়ালের গঠন অনেকটা ছোট হয়ে গিয়েছে, কিন্তু দাঁতের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকায় এই দাঁতের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। ফলে দাঁতটি সঠিকভাবে উঠে না, বেঁকে বা আংশিক উঠে যায়—এটাই প্রধান কারণ ব্যথার।
২. ইমপ্যাকশন (Impaction):
যখন দাঁত পুরোপুরি উঠে না, আর আশপাশের টিস্যু ও দাঁতের সঙ্গে টক্কর খায়, তখন দাঁত 'ইমপ্যাকটেড' হয়। এতে জায়গার সংকট ও চাপ সৃষ্টি হয়, যা ব্যথা ও স্ফীতি ডেকে আনে।
৩. ইনফেকশন ও পরিজীবী (Bacterial Infection and Abscess Formation):
আংশিক ওঠা দাঁতের কারণে খাবারের অবশিষ্টাংশ সেখানে আটকে যায়, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। ফলশ্রুতিতে দাঁতের আশপাশে ফোড়া বা পুঁজ জমে ইনফেকশন ছড়ায়।
৪. দাঁতের ক্ষয় ও ঘনিষ্ঠ দাঁতের সমস্যা:
আক্কেল দাঁত যখন বেঁকে উঠে আশপাশের দাঁতের সঙ্গে চাপ সৃষ্টি করে, তখন পাশের দাঁতেও ক্ষয় বা ক্ষতি হতে পারে। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. দাঁতের সার্বিক বিকৃতি ও চোয়ালের সমস্যা:
অনেক সময় আক্কেল দাঁতের চাপের কারণে চোয়াল কিংবা দাঁতের সারি বিকৃত হতে পারে, যা মুখের স্বাভাবিক গঠন ও মুখোশ ব্যাহত করে।
আক্কেল দাঁতের ব্যথা এর উপসর্গ:
⇨ মুখের পেছনের অংশে হঠাৎ তীব্র ব্যথা
⇨ গলা বা কানেও ব্যথা ছড়ানো
⇨ মুখ ফুলে যাওয়া, বিশেষ করে চোয়ালের পাশে
⇨ মুখ ঠিকমতো না খোলার সমস্যা
⇨ দাঁতের আশপাশে লালচে ভাব, পুঁজ জমা
⇨ গলাবাঁধা, গলার স্ফীত লিম্ফ নোড
⇨ মাথাব্যথা বা ঝিমঝিম ভাব
⇨ লজিস্টিক বা হাঁচি-কাশিতে ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি
আক্কেল দাঁতের ব্যথার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
মানবদেহের চোয়াল কঙ্কাল ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে বিবর্তনের কারণে। প্রাচীন কালে মানুষ কাঁচা ও কঠিন খাদ্য খেত, যার জন্য বড় ও শক্ত দাঁত প্রয়োজন ছিল। আধুনিক খাদ্যপ্রক্রিয়ায় খাদ্য নরম হওয়ায় চোয়াল ছোট হলেও দাঁতের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকায় জায়গার সংকট তৈরি হয়। এই কারণে আক্কেল দাঁত ঠিকমতো উঠে না এবং বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে।
দাঁতের নাভিকীয় অংশে অস্বাভাবিক চাপ পড়ার ফলে আশপাশের নরম টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা শুরু হয়। এছাড়া মুখের ভেতরে দাঁতের অনিয়মিত অবস্থানের কারণে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জটিল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যা স্ফীতি ও ব্যথা আরও বাড়িয়ে তোলে।
আক্কেল দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়:
১. সঠিক মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি:
দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত ব্রাশ ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
২. লোণাক্ত গরম পানি দিয়ে কুলকুচি:
ইনফেকশন কমাতে এবং মুখের স্ফীতি প্রশমিত করতে সহায়ক।
৩. ব্যথানাশক ও অ্যান্টিবায়োটিক:
ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে, বিশেষ করে ইনফেকশন থাকলে।
৪. ঠাণ্ডা সেঁক (আইস প্যাক):
স্ফীতি ও ব্যথা কমাতে কার্যকর।
৫. দাঁত উঠানো (এক্সট্রাকশন):
যদি দাঁত সঠিকভাবে উঠে না বা রোগগ্রস্ত হয়, তখন দাঁত টেনে ফেলা হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
৬. ডেন্টাল স্ক্যান বা এক্স-রে:
দাঁতের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য আধুনিক রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা অপরিহার্য।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
⇨ ব্যথা ৩-৪ দিন ধরে না কমলে
⇨ মুখ বা গলা ফুলে গেলে
⇨ দাঁতের আশপাশে রক্তপাত বা পুঁজ জমলে
⇨ গলা বা কানের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে
⇨ ঠাণ্ডা সেঁক বা ব্যথানাশক কাজ না করলে
আক্কেল দাঁতের ব্যথার স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রভাব
দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা না করলে আক্কেল দাঁতের সমস্যা শারীরিকের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তীব্র ব্যথার কারণে ঘুমের সমস্যা, কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়া, উদ্বেগ ও অবসাদের সম্ভাবনা বাড়ে। তাই সময়োপযোগী চিকিৎসা ও সচেতনতা জরুরি।
সর্বোপরি, আক্কেল দাঁতের ব্যথা মাত্র একটি দাঁতের সমস্যা নয়, এটি মানুষের খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক গঠন এবং জীবনের মানের সাথে সম্পর্কিত একটি জটিল বিষয়। তথ্যভিত্তিক সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপের মাধ্যমে এই ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তি ও চিকিৎসা পদ্ধতি আক্কেল দাঁতের সমস্যার কার্যকর সমাধান দিচ্ছে, যা প্রত্যেকেরই জানা ও অনুসরণ করা উচিত।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।