রোজা বা উপবাসে কোন ফল সবচেয়ে উপকারী? বিজ্ঞান বলছে স্পষ্ট কথা!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
রমজান, উপবাস বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং—যেভাবেই হোক, রোজার সময় শরীর বিশেষ ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় খাবার পানীয় থেকে বিরত থাকা দেহের জন্য একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। তাই, রোজা ভাঙ্গার পর শরীর যাতে দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারে, তার জন্য সঠিক ফল বাছাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন রোজার পর ফল খাওয়া জরুরি?
রোজা বা উপবাস শেষ হলে শরীর নীরব অবস্থা থেকে সক্রিয় অবস্থায় ফিরে আসে। তখন রক্তে শর্করার মাত্রা কমে থাকে, এবং শরীর দ্রুত শক্তি চায়। এই সময় পুষ্টিকর ফলমূল খেলে দেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত হয়, ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে, এবং হজম তন্ত্রও সচল থাকে।
যে ফলগুলো সবচেয়ে বেশি উপকারী:
১. খেজুর, প্রাচীন শক্তির উৎস-
খেজুরে রয়েছে দ্রুত কাজ করা প্রাকৃতিক চিনি যা রোজা ভাঙার পর শরীরকে দ্রুত শক্তি জোগায়। পাশাপাশি এতে আছে পটাশিয়াম, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং পানিশূন্যতা কমায়।
২. কলা, হজমে সহায়ক ও পেশী শক্তির বন্ধু-
কলায় রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন B6, যা পেশী ক্লান্তি দূর করে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে তোলে। এছাড়া কলার আঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।
৩. তরমুজ: পানিশূন্যতা কমানোর প্রাকৃতিক সমাধান-
গরমকালে তরমুজের মতো পানি-সমৃদ্ধ ফল রোজার পরে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন, যা সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে।
৪. আপেল: হজম শক্তি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার-
আপেলে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এতে আছে ভিটামিন C, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. বেদানা ও অন্যান্য শুকনো ফল: রক্ত পরিষ্কার ও শক্তি বৃদ্ধিকারক-
বেদানায় থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের বার্ধক্য কমায় এবং রক্তকে পরিষ্কার করে। শুকনো ফল যেমন আখরোট, বাদামও শরীরের দীর্ঘস্থায়ী শক্তি জোগাতে সক্ষম।
বিজ্ঞান যা বলছে-
সাম্প্রতিক পুষ্টিবিজ্ঞান গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা ভাঙার সময় ফলের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ও পানির পরিমাণ বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। উচ্চ গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স যুক্ত ফল যেমন খেজুর দ্রুত শরীরে শক্তি প্রবাহিত করে, আর পানি সমৃদ্ধ তরমুজ শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে। ফলমূলের এনজাইম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে মেরামত করে এবং হজমে সাহায্য করে।
ফল খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি-
◑ পরিমাণে সচেতন হন: রোজা ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত ফল খাওয়া হজমে সমস্যা করতে পারে। তাই ধীরে ধীরে খান।
◑ শরীরের সংকেত বুঝুন: যদি পেট ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে পরেরবার কম ফল খান।
◑ জল পান করুন: ফল খাওয়ার সাথে সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, যাতে শরীর ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকে।
◑ অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ফল এড়িয়ে চলুন: বিশেষ করে ঠাণ্ডা ফল অনেক বেশি খাওয়া পেটে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
✪ বিশেষ টিপস:
রোজার পর যদি শক্তি ফেরাতে চান, তাহলে খেজুরের সঙ্গে শশা দিয়ে খান, এতে শরীর দ্রুত হাইড্রেটেড ও শক্তিশালী হয়। অন্যদিকে, পুষ্টিকর স্ন্যাক্স হিসেবে কলা বা আপেল বেছে নিতে পারেন।
রোজা বা উপবাসের সময় ফল নির্বাচন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়া। শুধুমাত্র স্বাদ নয়, শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি বিবেচনায় ফল বাছাই করতে হবে। স্বাস্থ্যকর ফল খেলে শরীর থাকবে সুস্থ, মন থাকবে চঞ্চল, আর রোজার ফায়দা মিলবে সম্পূর্ণভাবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।