আপনার শরীরে লুকানো হার্পিস ভাইরাস আর নার্ভের যন্ত্রণা—জানুন আসল কারণ ও ভয়ঙ্কর পরিণতি!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
হার্পিস ভাইরাসের সংক্রমণের পর নার্ভে যে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়, তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে হেল্পাটিক নিউরালজিয়া (Postherpetic Neuralgia বা PHN) বলা হয়। এটি হার্পিস জস্টার ভাইরাস (Varicella-Zoster Virus) সংক্রমণের প্রভাবের একটি জটিল অবস্থা, যা রোগ নিরাময়ের পরও কয়েক মাস থেকে বছরের পর বছর ধরে ব্যথা হতে পারে।
হার্পিস ভাইরাস ও তার স্নায়ু সংক্রমণ
হার্পিস জস্টার ভাইরাসই মেদ জ্বর বা Chickenpox এর কারণ। এই ভাইরাস শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ু কাণ্ড (nerve ganglia) এ লুকিয়ে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে আবার সক্রিয় হয়ে যায়। এই সক্রিয় সংক্রমণ ত্বকে ফোঁটা এবং ব্যথা সৃষ্টি করে, যাকে হার্পিস বলা হয়।
হেল্পাটিক নিউরালজিয়া কেন হয়?
সংক্রমণ নিরাময়ের পরও ভাইরাস স্নায়ুতে ক্ষতি সাধন করে থাকে। স্নায়ু কোষের প্রোটিন ও নিউরোট্রান্সমিটার (nerve signaling molecules) এর ক্ষতি ও স্নায়ুর সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়ায় ব্যথার অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিশেষ করে স্নায়ু সংকেত নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হওয়ায় 'অ্যালজেসিয়া' (Algesia) বা অতিরিক্ত ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
⇨ তীব্র, দগদগে, সুঁচকাঠিন ব্যথা,
⇨ স্পর্শের সময় অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা,
⇨ ঘামের সমস্যা ও ত্বকের রঙ পরিবর্তন,
⇨ কখনো শীত বা গরমে ব্যথা বাড়তে পারে,
⇨ অনেক সময় ঘুম বিঘ্নিত হয়।
ঝুঁকি ও প্রভাব
বয়স্ক ও ইমিউন কম্প্রোমাইজড রোগীদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে হার্পিস সংক্রমণের ২০-৩০% রোগী এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগতে পারেন। এছাড়া ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা ইমিউনোসাপ্রেশন (যেমন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগী) রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
চিকিৎসা পদ্ধতি
➤ ঔষধ:
১। অ্যান্টি-নিউরোপ্যাথিক ঔষধ: গ্যাবাপেন্টিন (Gabapentin), প্রেগাবালিন (Pregabalin) স্নায়ুর অতিসংবেদনশীলতা কমাতে ব্যবহৃত।
২। পেইন কিলার ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট: ব্যথা ও মানসিক চাপ কমাতে প্রায়ই দেওয়া হয়।
৩। লোকাল অ্যানেস্থেটিক ক্রিম বা প্যাচ: যেমন ক্যাপসাইসিন ক্রিম।
➤ থেরাপি:
১। ফিজিওথেরাপি ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২। নিউরাল ব্লক থেরাপি: নির্দিষ্ট নার্ভ ব্লক করে ব্যথা কমানো হয়।
➤ ভ্যাকসিন:
হার্পিস জস্টার ভ্যাকসিন সংক্রমণের ঝুঁকি ও পরবর্তী হেল্পাটিক নিউরালজিয়ার প্রবণতা কমাতে কার্যকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে ভ্যাকসিন ৫০-৭০% পর্যন্ত ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।
বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার সাম্প্রতিক অগ্রগতি:
⇨ নিউরোইমেজিং ও স্নায়ু বায়োপসি গবেষণায় দেখা গেছে, PHN রোগীদের স্নায়ুতে প্রদাহ ও রেশমিলাপের (remodeling) কারণে ব্যথার কেন্দ্রগুলো সক্রিয় থাকে।
⇨ স্নায়ু পুনর্গঠনের জন্য নতুন ওষুধ এবং জিন থেরাপির গবেষণা চলছে।
⇨ নিউরোস্টিমুলেশন (nerve stimulation) যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
প্রতিরোধের গুরুত্ব
হার্পিস ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ ব্যথা কমাতে অপরিহার্য। রোগীদের নিয়মিত ফলো-আপ এবং সঠিক ঔষধ গ্রহণ ব্যথার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে।
সামগ্রিক প্রভাব:
হেল্পাটিক নিউরালজিয়া শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক জীবনকেও প্রভাবিত করে। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণে ঘুমের সমস্যা, অবসাদ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ঘটতে পারে। তাই রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা এবং পারিবারিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হার্পিস ভাইরাস সংক্রমণের পর নার্ভের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা নিয়ে গবেষণা ও চিকিৎসা প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হচ্ছে। তবুও রোগ প্রতিরোধ ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেই এই যন্ত্রণার মাত্রা কমানো সম্ভব। সচেতনতা ও আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর জীবনমান উন্নত করা যায়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।