অসাধ্য চিকিৎসার গোপন অস্ত্র-স্টেম সেল থেরাপি কি শেষ ভরসা হতে চলেছে?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানবদেহের অসংখ্য কোষের মধ্যে স্টেম সেল (Stem Cell) একটি বিশেষ ধরণের কোষ, যা নিজের মত একই ধরনের কোষ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের কোষে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই বৈশিষ্ট্যই স্টেম সেলকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনন্য করে তুলেছে। বর্তমানে স্টেম সেল থেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো পুনরুদ্ধার বা পুনর্গঠন করা সম্ভব হচ্ছে।
স্টেম সেল কি এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?
স্টেম সেল হচ্ছে এমন কোষ যেগুলো অদক্ষিণ (Undifferentiated), অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো কোষে রূপান্তরিত হয়নি।
দুই ধরনের স্টেম সেল রয়েছে:
⇨ এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেল এবং
⇨ অ্যাডাল্ট (বা প্রাপ্তবয়স্ক) স্টেম সেল।
এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেল সাধারণত ভ্রূণের পর্যায়ে থাকে এবং তা শরীরের সব ধরনের কোষে পরিণত হতে পারে। অন্যদিকে অ্যাডাল্ট স্টেম সেল শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে থাকে এবং মূলত সেই স্থানের কোষ গঠন করে।
মানবদেহে বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন পারকিনসন, অ্যালজাইমার, হৃদরোগ, কিডনি ক্ষতি, ডায়াবেটিস, এবং এমনকি কিছু ধরণের ক্যান্সার চিকিৎসায় স্টেম সেল থেরাপির সম্ভাবনা ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ, এই কোষগুলো শরীরের নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে নতুন কোষে পরিবর্তন করে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
স্টেম সেল থেরাপির প্রক্রিয়া:
স্টেম সেল থেরাপি মূলত তিনটি ধাপে পরিচালিত হয়:
১। স্টেম সেল সংগ্রহ: রোগীর শরীর থেকে, সাধারণত হাড়ের মজ্জা বা রক্ত থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়। কখনো কখনো অতিরিক্ত গবেষণার মাধ্যমে এই কোষগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
২। স্টেম সেল সংস্কার ও বৃদ্ধি: সংগ্রহিত কোষগুলোকে ল্যাবরেটরিতে বিশেষ পরিবেশে গজানো হয় যাতে সেগুলো প্রয়োজনীয় কোষে পরিণত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কোষগুলোকে নির্দিষ্ট রোগের জন্য প্রোগ্রাম করা হয়।
৩। প্রয়োগ: এরপর এই কোষগুলো শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়, যেখানে সেগুলো কাজ শুরু করে ক্ষত সারানো ও পুনঃগঠন।
স্টেম সেল থেরাপির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও সাফল্য:
বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, স্টেম সেল থেরাপি বিশেষ করে হার্টের আঘাতপ্রাপ্ত অংশ পুনরুদ্ধারে, জটিল নিউরোলজিক্যাল রোগ যেমন স্ট্রোক বা পারকিনসনের চিকিৎসায় আশাব্যঞ্জক ফলাফল দিয়েছে। এছাড়াও ত্বক ও হাড়ের ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতির ব্যবহার ব্যাপক গবেষণার বিষয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টেম সেল থেরাপির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে নিয়মিত নির্দেশিকা তৈরি করছে। যদিও এখনও এর সম্পূর্ণ সফলতা নিশ্চিত হয়নি, তবু চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিগন্তে এটি অন্যতম সম্ভাবনাময় গবেষণার ক্ষেত্র।
বাংলাদেশে স্টেম সেল গবেষণা ও ভবিষ্যত:
বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যখাতে স্টেম সেল থেরাপির প্রতি আগ্রহ বেড়েই চলছে। দেশের বিভিন্ন গবেষণাগার ও মেডিকেল কলেজে এই থেরাপির ওপর প্রাথমিক গবেষণা ও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আগামী দিনে সরকারের সহায়তায় এই গবেষণা আরও বিস্তৃত ও ফলপ্রসূ হওয়ার আশা রয়েছে।
সতর্কতামূলক বিষয়সমূহ
স্টেম সেল থেরাপি এখনও সম্পূর্ণরূপে সব রোগের জন্য ব্যবহারিক ও অনুমোদিত নয়। অসাবধানতায় কিংবা অনুমোদনবিহীন চিকিৎসা কার্যক্রম কখনো বিপদজনক হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে প্রয়োগ করাই গুরুত্বপূর্ণ।
স্টেম সেল থেরাপি মানুষের শরীরের নিজস্ব কোষের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কেবল ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন আশার আলো হয়ে উঠবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই অভূতপূর্ব অগ্রগতি মানবজীবনের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে-যা এক সময় কল্পনার বাইরে ছিল, আজ তা বাস্তবতার দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।