ওষুধে নয়, ফলেই মিলছে প্রতিকার-প্রাকৃতিক চিকিৎসায় চমকপ্রদ মোড়!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
এক সময়, চিকিৎসা মানেই ছিল পাতা, মূল, ফল আর মাটির ঘ্রাণে ভরপুর প্রকৃতির কোলে নিরাময় খোঁজা। আজও, বিশ্ব যখন রসায়নভিত্তিক ওষুধে অভ্যস্ত, তখন বহু মানুষ ফিরে যেতে চাইছে সেই পুরোনো পথের কাছে-প্রাকৃতিক চিকিৎসা আর আয়ুর্বেদিক ফলভিত্তিক নিরাময়ের দিকে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই পদ্ধতিগুলো কতটা বাস্তবসম্মত, কতটা বৈজ্ঞানিক, আর কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলো সত্যিই কার্যকর?
আপেল, আমলকি, জাম, লেবু, পেঁপে, কলা কিংবা কাঁচা হলুদ-এসব ফল শুধুই পুষ্টিকর নয়; এগুলোতে থাকে নানা প্রকার ফাইটোকেমিক্যাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম, যা নির্দিষ্ট শরীরক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে। উদাহরণস্বরূপ,
⇨ আমলকি: ভিটামিন C-এর ভাণ্ডার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে এটি কোষ সুরক্ষায় কার্যকর এবং লিভার ফাংশনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
⇨ পেঁপে: প্যাপেইন নামক এনজাইম হজমে সহায়ক। ত্বক, অন্ত্র এবং লিভারের জন্যও উপকারী বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
⇨ লেবু ও মালটা: সাইট্রিক অ্যাসিড ও ফ্ল্যাভোনয়েডে সমৃদ্ধ। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
আয়ুর্বেদের মূল কথা:
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় লক্ষ্য থাকে "সমগ্র শরীর ও মনের ভারসাম্য রক্ষা"। ফলভিত্তিক থেরাপি এখানে 'সারাংশ', কারণ প্রতিটি ফলের ভেতরে থাকে দোষ-ত্রিদোষ নিবারণের উপাদান। যেমন-
⇨ বিভিন্ন তিক্ত ফল বা বীজ: কফ দূর করতে সহায়ক।
⇨ মিষ্টি ফল: পিত্ত কমায় ও স্নায়ুকে শান্ত করে।
⇨ ত্রিফলা (হারিতকি, বেহাড়া, আমলকি): আয়ুর্বেদের অন্যতম ক্লাসিক ফর্মুলা, যা পাচনতন্ত্র, ত্বক এবং রক্ত পরিশোধনে ব্যবহৃত হয়।
বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডে মূল্যায়ন-
আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখন অনেকটাই আয়ুর্বেদিক এবং প্রাকৃতিক থেরাপির কার্যকারিতা যাচাই করছে। কিছু ফলের নির্যাসকে কেন্দ্র করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও হয়েছে।
ইউরোপ এবং এশিয়ায় বিভিন্ন ফলভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য আজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নিজেও বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট গবেষণা ও রেগুলেশনকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
তবে, সব ফল বা প্রাকৃতিক উপাদান চিকিৎসায় কার্যকর নয়। অনেক সময় ভুল প্রয়োগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয়। বিশেষ করে, রোগের প্রকৃতি না জেনে কাঁচা হলুদ বা তেঁতুল জাতীয় কিছু উপাদান অতিরিক্ত সেবনে হজমের সমস্যা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া বা ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
ভবিষ্যতের চিকিৎসা: সহাবস্থান, প্রতিস্থাপন নয়-
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এখন ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন কনসেপ্ট চালু-যেখানে রসায়নভিত্তিক চিকিৎসার পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক বা প্রাকৃতিক পদ্ধতি প্রয়োগ হয় চিকিৎসকের পরামর্শে। ফলে, ফলভিত্তিক চিকিৎসা এখন আর নিছক লোককথা নয়, বরং একটি বিকল্প স্বাস্থ্যজ্ঞান যা সচেতন প্রয়োগে ফলপ্রসূ হতে পারে।
ফল আমাদের শুধু ক্ষুধা মেটায় না, সঠিক জ্ঞানে ব্যবহারে হতে পারে শক্তিশালী নিরাময়কারকও। তবে মনে রাখতে হবে-প্রাকৃতিক শব্দ মানেই সবসময় নিরাপদ নয়। আয়ুর্বেদের জ্ঞান, বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ আর সচেতনতার সমন্বয়ই পারে বাস্তবিকভাবে এই প্রাচীন পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে।
সতর্ক পরামর্শ:
যেকোনো প্রাকৃতিক চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগের ধরন বুঝে, প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যবিদের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ চিকিৎসা কোনো অভ্যাস নয়, এটি জ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।