ডার্ক এনার্জি কি আমাদের পরিচিত বিশ্ব ছাড়িয়ে এক অন্য জগতে নিয়ে যাবে? বিজ্ঞান কী বলছে!!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বজগতের আনুমানিক ৯৫ শতাংশ অংশের রহস্যময় উপাদান-ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি-আজও বিজ্ঞানীদের জন্য অন্যতম বড় প্রশ্নচিহ্ন। আমাদের পরিচিত সাধারণ পদার্থ (যেমন গ্রহ, তারকা, গ্যাস) মাত্র ৫ শতাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, বাকিটা লুকিয়ে আছে অদৃশ্য এবং অজানা শক্তির আড়ালে।
ডার্ক ম্যাটার বলতে বোঝানো হয় এমন এক ধরনের পদার্থ যা আলো বা অন্য কোনো বিকিরণ শোষণ, নির্গত বা প্রতিবিম্বিত করে না, ফলে সরাসরি পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়। তবে, এর উপস্থিতি মহাবিশ্বের মাধ্যাকর্ষণীয় প্রভাব থেকে স্পষ্ট।
আমাদের গ্যালাক্সির তারাগুলোর ঘূর্ণনের গতি বিশ্লেষণ থেকে প্রথম ধাক্কা লাগে—এই গতি এতটাই দ্রুত যে, দৃশ্যমান পদার্থ দিয়ে গ্যালাক্সিকে আটকে রাখা সম্ভব নয়। এতে বোঝা যায়, গ্যালাক্সির ভেতর প্রচুর অদৃশ্য পদার্থ আছে যা অতিরিক্ত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তৈরি করছে। একইভাবে, গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলোর গতিবিধি এবং মহাবিশ্বের বৃহৎ কাঠামোর পর্যবেক্ষণও ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করে।
বিজ্ঞানীরা অনেক সম্ভাব্য প্রকারভেদ আলোচনা করেছেন—WIMPs (Weakly Interacting Massive Particles), axions, sterile neutrinos ইত্যাদি। তবে এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনো কণাকে শনাক্ত করা যায়নি। গবেষণার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গ্লোবাল ল্যাবরেটরি ও মহাকাশ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
১৯৯৮ সালে সুপারনোভা (বিশাল বিস্ফোরণ ঘটানো নক্ষত্র) পর্যবেক্ষণ থেকে আবিষ্কৃত হয় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত হচ্ছে। এ জন্য বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত শক্তির কথা ধারণা করেন, যাকে ডার্ক এনার্জি বলা হয়। এটি মহাবিশ্বের মোট শক্তির প্রায় ৬৮-৭০ শতাংশ দখল করে আছে।
ডার্ক এনার্জির প্রকৃতির বিষয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো "কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট" ধারণা। এটি মূলত মহাকাশের ফাঁকা জায়গায় থাকা স্থির শক্তি। এই শক্তি মহাবিশ্বের সময় ও স্থানকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
যেভাবে ডার্ক এনার্জির প্রভাব বোঝা যায়: বিশ্বের বিভিন্ন দূরবর্তী গ্যালাক্সি ও সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ, মহাকাশের মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন, এবং গ্যালাক্সির বিস্তৃত ছড়ানোর প্যাটার্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই শক্তির অস্তিত্ব বোঝা যায়।
মহাবিশ্বের ভবিষ্যত এবং ডার্ক এনার্জি -
যদি ডার্ক এনার্জির প্রভাব অব্যাহত থাকে, তাহলে মহাবিশ্ব চিরকাল প্রসারিত হবে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত সব নক্ষত্র, গ্যালাক্সি দূরে সরে যাবে, এক প্রকার "হিট ডেথ" বা শীতল মৃত্যু ঘটবে। অন্যদিকে, ডার্ক এনার্জির প্রকৃতি ও পরিবর্তনশীলতা বুঝতে পারলে এই ভবিষ্যতের রূপান্তর ঘটতে পারে।
ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির গবেষণা: বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থা এবং বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র জটিল ডিটেক্টর ও পরিমাপ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যেমন, মহাকাশ টেলিস্কোপ, গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ পর্যবেক্ষণ, এবং নিউট্রিন ডিটেক্টর। এগুলো ডার্ক ম্যাটার কণা সনাক্তকরণ ও ডার্ক এনার্জির গুণাবলী মাপার লক্ষ্যে কাজ করছে।
আমাদের সাধারণ জীবনে প্রভাব-যদিও ডার্ক ম্যাটার বা ডার্ক এনার্জি সরাসরি দৈনন্দিন জীবনে অনুভূত হয় না, তবে মহাবিশ্বের বৃহৎ গঠন ও গতিবিধি বোঝার জন্য এগুলো অপরিহার্য। এর মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও জ্ঞানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি বিজ্ঞান ও মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য। এগুলো ব্যতীত মহাবিশ্বের গঠন, তারকার সৃষ্টি ও বিলুপ্তি, মহাকাশের প্রসারণ সব কিছু বোঝা অসম্ভব। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে এই অদৃশ্য শক্তিগুলোকে বোঝার মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্বের চিরন্তন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবো।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।