লক্ষণহীন হলেও প্রাণঘাতী! যেকারনে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার নিয়ে বিজ্ঞানীরা এতটা আতঙ্কিত

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মহিলাদের জীবনে এক অদৃশ্য, নিঃশব্দ শত্রু হিসেবে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার। এই রোগ এমনভাবে শরীরে বিস্তার লাভ করে যে প্রাথমিক অবস্থায় কোনও স্পষ্ট লক্ষণ থাকে না-আর এই 'নীরবতা'ই একে করে তোলে ভয়ঙ্কর।
কি এই ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার?
ডিম্বাশয় হলো মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের একটি অংশ, যা ডিম্বাণু তৈরি করে এবং প্রজননের জন্য জরুরি হরমোন নিঃসরণ করে। কিন্তু যখন এই কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়ে টিউমার গঠন করে এবং তা ক্যান্সারে পরিণত হয়, তখনই তাকে বলা হয় Ovarian Cancer বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার।
কেন এত বিপজ্জনক?
এই ক্যান্সার সাধারণত তলপেটের গভীরে বেড়ে ওঠে-এবং প্রাথমিক ধাপে কোনও জোরালো উপসর্গ না থাকায় অনেক সময়েই রোগটি ধরা পড়ে দেরিতে। এর ফলে যখন রোগী চিকিৎসা নেয়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে শরীরের অন্যান্য অংশে।
প্রাথমিক লক্ষণ – অজানা সংকেত!
⇨ তলপেটে চাপ অনুভব
⇨ বেলুনের মতো ফোলা বা অস্বস্তি
⇨ দ্রুত পেট ভরে যাওয়া
⇨বমি ভাব বা হজমে সমস্যা
⇨ প্রস্রাবে বারবার চাপ
⇨ ওজন হ্রাস বা হরমোনগত পরিবর্তন
এই লক্ষণগুলো দৈনন্দিন ব্যস্ততায় অনেকেই উপেক্ষা করে ফেলেন, কিন্তু নিয়মিত ও দীর্ঘদিন ধরে চললে অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
বিজ্ঞান যা বলছে -
জেনেটিক মিউটেশন, বিশেষ করে BRCA1 ও BRCA2 নামক জিনের পরিবর্তন, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এই জিনগুলো যখন ঠিকভাবে কাজ করে না, তখন কোষগুলোর বৃদ্ধি আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মেনোপজ-এর পরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তাদের ক্ষেত্রে কোষের জেনেটিক স্তরে আগে থেকেই নানা পরিবর্তন ঘটে থাকে, যা সময়ের সঙ্গে ক্যান্সারে রূপ নেয়।
যারা বেশি ঝুঁকিতে!!
⇨ যাদের পরিবারে স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে
⇨ যাঁরা সন্তান জন্ম দেননি বা দেরিতে মা হয়েছেন
⇨ দীর্ঘদিন ধরে হরমোন থেরাপি নিয়েছেন
⇨ স্থূলতা বা হরমোন ভারসাম্যহীনতা রয়েছে
আধুনিক চিকিৎসা ও গবেষণার পথ-
বর্তমানে চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সার্জারি ও কেমোথেরাপি। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে Targeted Therapy ও Immunotherapy-র মতো পদ্ধতি, যা ক্যান্সার কোষকে নির্দিষ্টভাবে টার্গেট করে ধ্বংস করে এবং শরীরের সুস্থ কোষকে তুলনামূলকভাবে অক্ষত রাখে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার ঝুঁকি রয়েছে কিনা?
বিশেষ কিছু জিনগত পরীক্ষা যেমন Genetic Screening এর মাধ্যমে বোঝা সম্ভব কার ঝুঁকি বেশি। প্রাথমিক স্তরে সচেতনতা ও বছরে অন্তত একবার আলট্রাসনোগ্রাফি বা প্রয়োজনীয় স্ক্যানিং পরীক্ষাই হতে পারে রক্ষাকবচ।
ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার যতটা ভয়ঙ্কর, ঠিক ততটাই নিয়ন্ত্রণযোগ্য-যদি ধরা পড়ে প্রাথমিক পর্যায়ে। প্রতি নারীর উচিত শরীরের পরিবর্তনের প্রতি খেয়াল রাখা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। কারণ নীরব এই ঘাতককে ঠেকাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র-সচেতনতা ও সময়মতো পদক্ষেপ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।