জানুন কীভাবে অণু থেকে জীবনের প্রতিটি কোণে কোয়ান্টাম ফিজিক্স রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করছে!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আপনি যখন ফোনে কথা বলেন, গুগলে কিছু সার্চ করেন, কিংবা আধুনিক ওষুধ খেয়ে আরোগ্য লাভ করেন-আপনি কি জানেন, এসব কিছুতেই কাজ করছে কোয়ান্টাম ফিজিক্স? হ্যাঁ, এই বিজ্ঞানটি শুধু পরমাণু বা ফোটনের অদ্ভুত আচরণ বুঝতেই নয়-আমাদের প্রযুক্তি, চিকিৎসা, নিরাপত্তা এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনেও সরব, কিন্তু অদৃশ্যভাবে কাজ করছে।
কোয়ান্টাম ফিজিক্স মানে কি?
এটা কোনো যাদুবিদ্যা নয়, এটা বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা ব্যাখ্যা করে-"ক্ষুদ্রতম কণাগুলো (যেমন ইলেকট্রন বা ফোটন) কখনো কণার মতো, কখনো তরঙ্গের মতো আচরণ করে।"
তার মানে-এরা একই সঙ্গে একাধিক স্থানে থাকতে পারে (সুপারপজিশন), একে অপরের সঙ্গে আলোচনার মতো আচরণ করতে পারে (এনট্যাংগেলমেন্ট), এবং পর্যবেক্ষণ করলেই যেন বাস্তবতা বদলে যায় (অবজার্ভেশনাল ইফেক্ট)। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, এই বিষয়গুলোই আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বুনিয়াদ।
বাস্তব জীবনের পাঁচটি বড় ক্ষেত্রে কোয়ান্টামের আধিপত্য
১। কোয়ান্টাম কম্পিউটার:
আমাদের সাধারন কম্পিউটার বাইনারি (0 ও 1) দিয়ে কাজ করে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার কাজ করে "কিউবিট" দিয়ে, যেটি একইসঙ্গে 0 এবং 1 হতে পারে। ফলে গাণিতিক সমস্যার সমাধানে, জটিল সিমুলেশন বা বিশাল ডেটা বিশ্লেষণে এটি প্রায় হাজার গুণ দ্রুত।
উদাহরণ: কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে ওষুধ তৈরির সময় কেমিক্যাল রিয়্যাকশন গুলো আগেভাগেই সঠিকভাবে অনুমান করা যাচ্ছে।
২। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অণু পর্যায়ের বিপ্লব
চিকিৎসায় কোয়ান্টাম সেন্সর এখন এমন মাত্রায় চলে গেছে যে, এটি মানব কোষের অভ্যন্তরেও সঠিক তথ্য পাঠাতে ও গ্রহণ করতে পারে। ন্যানো প্রযুক্তির সঙ্গে মিলেমিশে এটি ক্যানসার সনাক্তকরণ, জিন থেরাপি এবং ব্যক্তিগত মেডিসিন তৈরির পথ খুলে দিয়েছে।
ভবিষ্যতে চিকিৎসা হবে রোগ 'হওয়ার আগেই' নির্ণয় এবং প্রতিরোধ।
৩। কোয়ান্টাম ইন্টারনেট ও নিরাপত্তা
বর্তমান ইন্টারনেট যেকোনো সময় হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে। কিন্তু কোয়ান্টাম এনক্রিপশন বা Quantum Key Distribution (QKD) এমন এক পদ্ধতি, যেটি হ্যাক করার চেষ্টা করলেই সংকেত ভেঙে যাবে এবং শনাক্ত করা যাবে।
এটি ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা প্রযুক্তি হতে চলেছে।
৪। কোয়ান্টাম সেন্সর: পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে মহাকাশে
আধুনিক কোয়ান্টাম সেন্সর দিয়ে ভূকম্প, চৌম্বক ক্ষেত্র, এমনকি মানুষের চিন্তার সিগন্যাল পর্যন্ত ধরা যাচ্ছে।
নভোযানের ন্যাভিগেশন সিস্টেম, সাবমেরিনের গভীর পানির গতি নির্দেশ, এমনকি ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস—সবখানেই কোয়ান্টাম সেন্সর এক বিপ্লবের নাম।
৫। দর্শন ও মানব চেতনায় কোয়ান্টামের ছোঁয়া
কোয়ান্টাম থিওরি এমন এক প্রশ্ন তোলে-বাস্তবতা কি আমরা যেভাবে দেখি ঠিক তাই? পর্যবেক্ষণ নিজেই কি বাস্তবতা সৃষ্টি করে?
এই ধারণাগুলো শুধু বিজ্ঞানে নয়, মানুষের মানসিকতা, সিদ্ধান্ত, এবং জ্ঞানতত্ত্বেও প্রভাব ফেলছে।
নতুন এক "Quantum Consciousness" বা কোয়ান্টাম-চেতনা নিয়ে গবেষণা চলছেই।
বাংলাদেশ ও বিশ্বে এর গুরুত্ব :
বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো ইতিমধ্যে কোয়ান্টাম রিসার্চে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা ইতিমধ্যে জাতীয় স্তরে কোয়ান্টাম ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে।
বাংলাদেশেও প্রয়োজন এখন থেকেই এই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে কোর্স চালু করা, গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো এবং নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করা।
একসময় বিদ্যুৎও অদ্ভুত মনে হতো, আজ সেটা ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না। ঠিক সেভাবেই কোয়ান্টাম ফিজিক্স এখন বাস্তবতার দরজায় দাঁড়িয়ে। এটা বুঝলে বিজ্ঞান শুধু বিজ্ঞান থাকবে না-এটা হবে নতুন জীবনের ভাষা, নতুন অর্থনীতির রূপরেখা। আজ যেটা অদৃশ্য, কাল সেটা হয়ে উঠবে অনিবার্য। কোয়ান্টাম ফিজিক্স তারই এক জীবন্ত প্রমাণ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।