মৃত কাফেরের জন্য দোয়া করা কি নিষিদ্ধ? কোরআন-হাদিস কী বলছে, জানুন স্পষ্টভাবে

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আজকের দিনে মুসলিমদের হৃদয়ে প্রশ্ন তোলে-"মৃত কাফেরের জন্য দোয়া করা কি সত্যিই হারাম?" এই প্রশ্নের উত্তর আবেগের নয়, ঈমানের জায়গা থেকে খুঁজতে হবে। ইসলাম অত্যন্ত স্পষ্টভাবে এই বিষয়ে অবস্থান নিয়েছে-যা কোরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং আজকের মুসলিমদের জানাও অত্যন্ত জরুরি।
ইসলামে দোয়া কেবল মানবিকতা নয়, বরং তা আল্লাহর প্রতি একান্ত বিনীত প্রার্থনা-একটি ইবাদত। আর এই ইবাদত যাদের জন্য করা হয়, তাদের ঈমান থাকাটা শর্ত।
কেউ যদি ইসলাম ও তাওহিদের স্বীকৃতি ছাড়া মৃত্যুবরণ করে, তবে সে পরকালে জাহান্নামের অধিবাসী। এরকম ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত চাওয়া আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্দেহ বা বিরোধিতা প্রকাশ করার নামান্তর-যা ঈমানের জন্য বিপজ্জনক।
আল্লাহ বলেছেন -
"নাবী ও মু'মিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তারা আত্মীয়-স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। "
[ সূরা তাওবা, আয়াত ১১৩ ]
কোন কোন বর্ণনায় এসেছে এই আয়াতের পেছনের প্রেক্ষাপট ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় চাচা আবু তালিব-এর মৃত্যু । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [দেখুন, বুখারী ৪৬৭৫; মুসলিম: ২৪] অন্য বর্ণনায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এসেছে, তিনি বলেন, এক লোককে তার পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা চাইতে দেখলাম। অথচ তারা ছিল মুশরিক। আমি বললাম, তারা মুশরিক হওয়া সত্বেও তুমি কি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছ? সে বলল, ইবরাহীম কি তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি? তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [তিরমিযী]
একইভাবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার পিতা আজার-এর জন্য দোয়া করেছিলেন। কিন্তু পিতা ছিলেন মূর্তিপূজক ও কুফরের মধ্যে জীবন শেষ করেন।
"ইবরাহীমের পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার ব্যাপারটি কেবলমাত্র তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে যা সে তার পিতাকে দিয়েছিল। কিন্তু যখন এটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু, তখন সে তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করল; ইবরাহীম ছিল অতি কোমল হৃদয়, সহিষ্ণু। "
[ সূরা তাওবা, আয়াত ১১৪ ]
এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, কেউ যদি কুফরের মধ্যে মৃত্যু বরণ করে, তার জন্য প্রার্থনার কোনো সুযোগ নেই- যদি সে নিজের পিতা-মাতাও হয়।
রাসুল (সা.) তার মা আমিনার কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। তখন কাঁদলেন-কেননা তিনি জানতেন, তাঁর মা ইসলাম কবুল না করেই ইন্তেকাল করেছিলেন।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত - তিনি বলেন, "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার নিজের মায়ের কবরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তাঁর আশেপাশের লোকদেরকেও কাঁদালেন। তারপর বললেন, আমি আমার মায়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের কবরের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। তাই তোমরা কবরের কাছে যাবে। কারণ কবর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়।"
[ সহীহ : মুসলিম ৯৭৬, আবূ দাঊদ ৩২৩৪, নাসায়ী ২০৩৪, ইবনু মাজাহ্ ১৫৭২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৩৯০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৪২ ]
এই হাদিসটি প্রমাণ করে দেয়, ইসলামের দৃষ্টিতে আবেগ নয়, ঈমানই চূড়ান্ত বিবেচ্য।
যেকারণে হারাম -
⇨ এটা আল্লাহর বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংঘর্ষ।
⇨ এতে দুনিয়ার দয়াশীলতা দিয়ে পরকালের কঠোর বাস্তবতাকে ঢাকার চেষ
⇨ এতে তাওহিদের সীমা দুর্বল হয়ে যায়।
⇨ আল্লাহর দেওয়া স্পষ্ট সীমানা লঙ্ঘিত হয়।
আজকের সমাজে মুসলিমদের অনেক আত্মীয় বা বন্ধু অমুসলিম হতে পারে। মৃত্যু হলে আবেগ হয়তো দোয়ার দিকে ঠেলে দেয়, কিন্তু ঈমানের আলোকেই আমাদের চলতে হবে।
প্রিয় মানুষ মারা গেছেন, কিন্তু কুফরের মধ্যে-এই কষ্ট সহ্য করেও একজন মু'মিন নিজেকে ইসলামের সীমায় রাখবে। এটিই ঈমানের বড় পরীক্ষা।
মুসলমানের করণীয়:
✔জীবিত অমুসলিমদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করুন।
✔মৃত্যুর আগে ঈমান ও তাওহিদের দাওয়াত দিন।
✔ মৃত্যুর পর কাফের বা মুশরিকদের জন্য প্রার্থনা থেকে বিরত থাকুন-এটাই ঈমানের দাবি।
ইসলামে আবেগের চেয়ে বড় সত্য হলো ঈমান। কারও প্রতি ভালোবাসা বা আত্মীয়তা দোয়ার যোগ্যতা দেয় না, যদি সে ঈমান ছাড়া মৃত্যুবরণ করে। আল্লাহর বিধান-সুস্পষ্ট, কঠিন, কিন্তু ন্যায্য।
তাই, জীবিত অবস্থায় সবাইকে হিদায়াতের দাওয়াত দিন। মৃত্যুর পরে ইসলামের সীমানায় থেকে নিজ ঈমান রক্ষা করুন। এটাই সফলতার একমাত্র পথ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।