আপনার শরীরের ভেতরে বাস করছে ১০০ ট্রিলিয়ন অদৃশ্য জীবাণু-তারা কি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে !!

আপনার শরীরের ভেতরে বাস করছে ১০০ ট্রিলিয়ন অদৃশ্য জীবাণু-তারা কি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে !!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমরা মনে করি , আমাদের শরীর শুধু আমাদেরই। অথচ বিজ্ঞান বলছে—এই শরীরের অধিকাংশ কোষই আমাদের নয়!মানব শরীরে প্রতি একটি মানব কোষের বিপরীতে অন্তত ১০টি করে অণুজীব বা জীবাণু বসবাস করে—এদেরই সম্মিলিত নাম "মাইক্রোবায়োম"। এই ক্ষুদ্র অদৃশ্য জীবগুলোর প্রভাব শুধু অন্ত্র বা হজমেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা আমাদের ইমিউন সিস্টেম, মস্তিষ্ক, আবেগ, রোগপ্রবণতা এমনকি ওষুধের কার্যকারিতাও নিয়ন্ত্রণ করে!

মাইক্রোবায়োম কী?

"Microbiome" হল আমাদের শরীরের মধ্যে বসবাসকারী কোটি কোটি ক্ষুদ্র জীবাণুর জগৎ। এদের মধ্যে রয়েছে:

১। ব্যাকটেরিয়া

২। ভাইরাস

৩। ফাঙ্গাস

৪। প্রোটোজোয়া
 

তারা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকে—সবচেয়ে বেশি অন্ত্রে (gut), ত্বকে, মুখে, ফুসফুসে ও যৌনাঙ্গে। এই জীবাণুরা আমাদের দেহে সহবাসী ও সহকারী হিসেবে কাজ করে, যেন এক অদৃশ্য সেনাবাহিনী।

 

এই অণুজীবেরা যেভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে-

⇨  মস্তিষ্ক ও আবেগে প্রভাব:

আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া সেরোটোনিন, ডোপামিনসহ বেশ কিছু নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সাহায্য করে।  অর্থাৎ, আপনি খুশি নাকি বিষণ্ণ-তা অনেকাংশেই নির্ধারিত হচ্ছে আপনার গাটে বাস করা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা!

⇨  হজম ও পুষ্টি শোষণ:

অনেক রকম খাবার, যেমন আঁশ বা জটিল শর্করা, মানুষ নিজে হজম করতে পারে না। এই কাজটা করে মাইক্রোবায়োম।

⇨ ইমিউন সিস্টেমের ট্রেনার:

শিশু অবস্থায় মাইক্রোবায়োম ইমিউন সিস্টেমকে "ট্রেন" করে, যাতে শরীর নিজের কোষ ও ভাইরাসকে আলাদা করে চিনতে শেখে।

⇨ ওষুধের উপকারিতা নির্ধারণ:

একই অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনসুলিন দুই জনের শরীরে একরকমভাবে কাজ নাও করতে পারে—তার কারণ এই অণুজীবদের গঠন।

 

গবেষণা যা বলছে-

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, অস্বাভাবিক মাইক্রোবায়োম গঠন ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অটোইমিউন ডিজিজ, এমনকি ক্যানসারের সঙ্গেও জড়িত।
Gut-Brain Axis ধারণাটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, যেখানে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বড় ভূমিকা রাখে।
 

মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য নষ্ট হলে যা  হয়

☞  অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার

☞ প্রসেসড ও চিনিযুক্ত খাবার

☞  দুধ ও মাংসে রাসায়নিক উপাদান

☞  অপর্যাপ্ত ঘুম বা স্ট্রেস

☞  জীবাণুমুক্ত জীবনের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁক

 

এই সবই আপনার অন্ত্রের জীবাণুদের হত্যা করে এবং ভালো-মন্দ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে।

এর ফল-

⇨ বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য

⇨ ত্বকের সমস্যা (অ্যাকনে, এলার্জি)

⇨ বারবার সর্দি-জ্বর

⇨ মানসিক অবসাদ

⇨ দীর্ঘমেয়াদে মেটাবলিক ও হরমোনাল গোলমাল
 

যা করনীয় :

✔  প্রোবায়োটিক (দই, ঘরে বানানো আচার, কিমচি)
✔ ফাইবারযুক্ত খাবার (শাক, ফল, বাদাম)

✔ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন ছাড়া খাবেন না

✔  নিয়মিত ঘুম, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ

✔ মাটির সংস্পর্শ, প্রকৃতির কাছাকাছি জীবন

✔  শিশুকে জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ানো (প্রাকৃতিক মাইক্রোবায়োম ট্রান্সফার হয়)

 

বাংলাদেশে এর গুরুত্ব -

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এখনও "মাইক্রোবায়োম" নিয়ে জনসচেতনতা গড়ে ওঠেনি। অথচ এখানে—

⇨ পানির দূষণ

⇨ ভেজাল খাবার

⇨ অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া
 

এসব মাইক্রোবায়োম ধ্বংস করছে নীরবে। বিশ্বব্যাপী যেখানে মাইক্রোবায়োম-ভিত্তিক থেরাপি চালু, আমাদের দেশে এখনও এটি "অদৃশ্য বিষয়" হিসেবেই রয়ে গেছে।

আপনার শরীর আপনি একা নন-আপনার সঙ্গে প্রতিনিয়ত বসবাস করছে কোটি কোটি অণুজীব, যারা আপনাকে বাঁচিয়ে রাখছে। তাদের যত্ন না নিলে, আধুনিক জীবনের যত দামী ওষুধই খাওয়া হোক না কেন, তা কাজে নাও লাগতে পারে। তাই শরীর ঠিক রাখতে হলে আগে ঠিক রাখতে হবে আপনার জীবাণুর রাজত্ব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ