ডোপামিনের দাসত্বে আমরা! সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রল ফাঁদে আপনি কতটা বন্দী জানেন কি?

ডোপামিনের দাসত্বে আমরা! সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রল ফাঁদে আপনি কতটা বন্দী জানেন কি?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

সন্ধ্যা নামে, হাতে মোবাইল... স্ক্রল শুরু হয়। মিনিট গড়ায় ঘন্টায়। আপনি ভাবছিলেন ৫ মিনিট-কিন্তু হঠাৎ দেখলেন ১ ঘণ্টা কেটে গেছে! এটা কেবল সময় নষ্ট নয়-এটা মস্তিষ্কের বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় বাঁধা পড়া এক গভীর মানসিক খেলাও বটে। এই খেলায় প্রধান চরিত্র-"ডোপামিন"। আর তার পেছনে লুকিয়ে থাকা চালক-সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম।

ডোপামিন কী? আর সেটা আমাদের এতটা প্রভাবিত করে কেন?

ডোপামিন হচ্ছে মস্তিষ্কের এক প্রকার নিউরোট্রান্সমিটার, যা মূলত আনন্দ, প্রত্যাশা ও পুরস্কারের অনুভূতি তৈরি করে। আপনি যখন কিছু আনন্দদায়ক, আকর্ষণীয় বা অপ্রত্যাশিত দেখেন-ডোপামিন নিঃসরণ হয়। আর মস্তিষ্ক তা "পুরস্কার" হিসেবে গ্রহণ করে এবং বারবার সে কাজটি করতে বলে। সোশ্যাল মিডিয়া এই বিষয়টিকে তাদের লাভের জন্য অত্যন্ত সুচতুরভাবে ব্যবহার করে।
 

'ইনফিনিটি স্ক্রলিং': কনটেন্ট নয়, আসলে আপনি হচ্ছেন প্রোডাক্ট

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউব ইত্যাদির "ইনফিনিটি স্ক্রল" ফিচারটি ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে যাতে আপনি থামতেই না পারেন। প্রতিটি নতুন পোস্ট বা ভিডিও মানেই নতুন এক ডোপামিন হিট। তারা কী দেখাবে, তা আপনি ঠিক করেন না-আপনার আচরণ, চোখ কোথায় বেশি সময় থাকে, আপনি কীতে 'লাইক' করেন, কোন ভিডিও শেষ করেন বা স্কিপ করেন না-এইসব তথ্য বিশ্লেষণ করে AI আপনার সামনে ঠিক সেই কনটেন্ট হাজির করে যা আপনাকে থামতে দেবে না।
 

এই আসক্তির প্রভাব কতটা ভয়ংকর?

◑  মনোযোগ কমে যাচ্ছে:

অতিরিক্ত স্ক্রলিং মস্তিষ্কের ফোকাস ক্ষমতা দুর্বল করে। প্রমাণ রয়েছে যে, একটানা ২০–৩০ মিনিট "হাই-ডোপামিন" কনটেন্ট দেখা আমাদের ব্রেনের গভীর চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস করে।

◑  ঘুমের সমস্যা:

সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটানো রাতের সময় নীল আলো এবং উত্তেজক কনটেন্ট মস্তিষ্ককে বিশ্রামের বিপরীতে স্টিমুলেট করে—ফলে ঘুম বাধাগ্রস্ত হয়।

◑  আনন্দের সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে:

প্রাকৃতিক আনন্দের (বই পড়া, প্রকৃতিতে হাঁটা, সঙ্গ দিতে পারা) প্রতি আসক্তি কমে যাচ্ছে, কারণ মস্তিষ্ক এখন "শর্ট, র‌্যাপিড রিওয়ার্ড"-এর অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

◑  মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির ঝুঁকি:

বারবার স্ক্রলিং কিন্তু আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে 'ডিজিটাল ডিপ্রেশন' এবং 'ফোমো' (FOMO – Fear of Missing Out) এর মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

 

কিছু বাস্তবিক সমাধান:

✔ ডোপামিন ডিটক্স করুন: দিনে অন্তত একবার স্ক্রিন ছাড়াই সময় কাটান—প্রকৃতি, সঙ্গীত, হাঁটাহাঁটি বা বই পড়ায় সময় দিন।

✔ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ টাইম লিমিট সেট করুন। নিজের মস্তিষ্ককে আপনি নিয়ন্ত্রণ করুন—অন্য কেউ নয়।

✔ 'no-phone zone' চালু করুন: রাত ৯টার পর ফোন বন্ধ রাখা বা খাটের পাশে না রাখা খুব কার্যকর হতে পারে।

✔  বিকল্প আনন্দ খুঁজুন: শরীরচর্চা, সৃজনশীল কাজ, নতুন কিছু শেখা—ডোপামিন এখানেও আসে, কিন্তু সেগুলোর প্রভাব সুস্থ ও দীর্ঘস্থায়ী।



আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি সোশ্যাল মিডিয়া চালাচ্ছেন। আসলে বাস্তবতা হচ্ছে—আপনাকেই চালানো হচ্ছে। আপনার মস্তিষ্ক এখন একটি অদৃশ্য "রিওয়ার্ড লুপ"-এর দাস, যেটা আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন না।  এখনই সময়—নিজেকে প্রযুক্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত করার।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ