১২ মাসে ড. ইউনূসের ১২ সফরে বাংলাদেশের অর্জন ও সাফল্য কি?

- Author, মুহাম্মাদ কুতাইবা
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ১১ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে মোট ১২টি অফিসিয়াল বৈদেশিক সফর করেছেন। এসব সফর ছিল বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান সুসংহত করা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি, আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি সফরই বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা ও অংশীদারিত্বের দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথম সফর ছিল ২০২৪ সালের ২৩–২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে, যেখানে তিনি জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদে যোগ দেন। পরিষদে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন, অভিবাসন সমস্যা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনে বাংলাদেশের অঙ্গীকার তুলে ধরেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগিতা ও জলবায়ু তহবিল প্রাপ্তির সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
দ্বিতীয় সফর ছিল আজারবাইজানের বাকুতে ২০২৪ সালের ১১–১৪ নভেম্বর। সিডিআর সম্মেলনে তিনি টেকসই উন্নয়ন, সবুজ প্রযুক্তি ও জলবায়ু অভিযোজন উদ্যোগে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এই সফরে আজারবাইজানের সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়।
তৃতীয় সফর অনুষ্ঠিত হয় ১৮–২০ ডিসেম্বর ২০২৪, মিশরের কায়রোতে D-8 সম্মেলনে। এখানে তিনি মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি, কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারের প্রস্তাব দেন। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিনিময় কর্মসূচির সম্ভাবনা তৈরি হয়।
২০২৫ সালের ২১–২৫ জানুয়ারি, চতুর্থ সফরে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে অংশ নেন। এখানে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা, অবকাঠামো বিনিয়োগের সুযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন নিয়ে উপস্থাপনা করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে “উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি” হিসেবে তুলে ধরা হয়।
পঞ্চম সফর ছিল ১৩–১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দুবাইতে বিশ্ব সরকারের সম্মেলনে। এখানে তিনি স্মার্ট গভর্ন্যান্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং টেকসই নগর পরিকল্পনা নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট সিটি উন্নয়নে নতুন প্রযুক্তি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ষষ্ঠ সফর ২৬–৩০ মার্চ ২০২৫, চীনের হাইনান ও বেইজিংয়ে। বোঅও ফোরামে অংশগ্রহণের পাশাপাশি চীনা নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রেলপথ, বন্দর উন্নয়ন, বিদ্যুৎ খাত ও প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা হয়। চীনের সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন সহযোগিতা আরও দৃঢ় হয়।
৩–৪ এপ্রিল ২০২৫, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে BIMSTEC সম্মেলন ছিলো ড. ইউনুসের সপ্তম আন্তর্জাতিক সফর। এখানে আঞ্চলিক বাণিজ্য, জ্বালানি সহযোগিতা ও সামুদ্রিক সংযোগ বৃদ্ধির রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক জোরদার হয়।
অষ্টম সফর ২১–২৫ এপ্রিল ২০২৫, কাতারের দোহায় Earthna Summit–এ। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সবুজ বিনিয়োগে কাজ করার প্রস্তাব দেন।
২৬–২৭ এপ্রিল ২০২৫, ভ্যাটিকান সিটিতে ছিলো ড. ইউনুসের নবম সফর । পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মানবিক কূটনীতির উদাহরণ স্থাপন করেন। এ সফরে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও আন্তধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
দশম সফর ২৮ মে – ১ জুন ২০২৫, জাপানের টোকিওতে Nikkei Forum–এ। এখানে তিনি জাপানি বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার, শিল্পাঞ্চল, ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠকে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রেলপথ সম্প্রসারণে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার হয়।
একাদশ ১০–১৩ জুন ২০২৫, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। এখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃনিশ্চিত ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আলোচনায় অংশ নেন। ব্রিটিশ ব্যবসায়ী মহলকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন এবং নতুন অর্থনৈতিক চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়।
সর্বশেষ ২০২৫ সালের ১১ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারি সফরে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। কুয়ালালামপুরে তিনি মালয়েশিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, শিক্ষা ও পর্যটনে সহযোগিতা, এবং হালাল পণ্য বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়গুলো আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে। এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ১২টি বৈদেশিক সফরের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে বৈশ্বিক কূটনীতিতে সক্রিয়, উদ্ভাবনী ও আস্থাশীল অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, প্রযুক্তি স্থানান্তর, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।