শিশুর জন্মের আগেই জীবন বদলানোর ক্ষমতা,জৈব উন্নয়ন নাকি জৈব দখলদারিত্ব? -জানুন CRISPR-এর সম্ভাবনা ও শঙ্কা!

শিশুর জন্মের আগেই জীবন বদলানোর ক্ষমতা,জৈব উন্নয়ন নাকি জৈব দখলদারিত্ব? -জানুন CRISPR-এর সম্ভাবনা ও শঙ্কা!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ধরা যাক, ভবিষ্যতে এমন এক শিশু জন্ম নিচ্ছে-তার চোখ নীল, উচ্চতা ৬ ফুট হবে বলে আগেই নিশ্চিত, আর তার শরীরে ক্যানসার প্রবেশ করারই সুযোগ নেই। আপনি অবাক হবেন না যদি জানতে পারেন, এ শিশুটি জন্মের আগে জেনেটিকভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এ সবকিছু সম্ভব হচ্ছে একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে, যার নাম-CRISPR। এই জিন-সম্পাদনার প্রযুক্তি এখন মানবজীবনের নিয়তি পুনর্লিখনের পর্যায়ে পৌঁছেছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে: এই শক্তির নিয়ন্ত্রণে কি আমরা প্রস্তুত?

CRISPR কী? সহজভাবে বললে এটি হলো জিনগত অস্ত্রোপচার!

CRISPR-Cas9 হলো একধরনের 'জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি'-যা জীবিত কোষের DNA-তে সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন করতে পারে।
এটি কাজ করে একটি মাইক্রোস্কোপিক কাঁচির মতো, যা আমাদের দেহের অভ্যন্তরের জিন কাটতে, মুছতে বা নতুনভাবে লিখতে পারে।
 

এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এখন:

✔রোগ সৃষ্টিকারী জিন মুছে ফেলতে পারছেন

✔ শরীরে প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে পারছেন

✔ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জিনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন

 

রোগমুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন-

◑ জিনগত রোগের প্রতিকার: থ্যালাসেমিয়া, সিকল সেল, সিস্টিক ফাইব্রোসিস-এমন শতাধিক মারাত্মক জিনঘটিত রোগে এই প্রযুক্তি এখন কার্যকরভাবে পরীক্ষিত।

◑ ক্যানসারের বিপক্ষে যুদ্ধ: মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ কোষের জিন বদলে ক্যানসারের কোষকে টার্গেট করানো হচ্ছে সফলভাবে।

◑ খাদ্য ও কৃষিতে বিপ্লব: ধান, গম, টমেটো-সবজির জিন পরিবর্তন করে এখন এমন ফসল তৈরি হচ্ছে যা খরা, লবণাক্ততা বা রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।

◑  অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সম্ভাবনা: শূকরের অঙ্গ মানুষের শরীরের উপযোগী করে তুলতে জিন সম্পাদনার ব্যবহার হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো লিভার বা কিডনি ঘাটতি আর থাকবে না।

 

ভয়াল দিক: 

☞ Designer Babies:ধনী অভিভাবকরা হয়তো একদিন বাচ্চার গায়ের রং, চোখের রঙ, উচ্চতা এমনকি বুদ্ধিমত্তাও নির্ধারণ করে দেবে-এতে সামাজিক বৈষম্য এক ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।

☞ মানবজাতির স্বাভাবিক বৈচিত্র্য বিলুপ্তির ঝুঁকি: একইরকম জিন প্রোগ্রাম করলে ভবিষ্যতের মানবজাতি হয়ে উঠতে পারে "জিনগতভাবে একঘেয়ে", যা মহামারির মতো সংকটে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

☞ জিনগত অস্ত্র বানানোর ঝুঁকি: CRISPR দিয়ে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া জিন-পরিবর্তন করে Bioweapon (জীবাণু অস্ত্র) তৈরি করা এখন কল্পনা নয়-এটি এক আন্তর্জাতিক উদ্বেগ।

☞  নৈতিকতা প্রশ্নে বিদীর্ণ বিশ্ব: একটি শিশু জন্মের আগেই তার জীবন বদলে দেওয়া-এটা কি জৈব উন্নয়ন, না জৈব দখলদারিত্ব? কে ঠিক করবে-কোন জিন থাকবে আর কোনটা বাদ যাবে?

 

বিশ্বের প্রতিক্রিয়া: বিজ্ঞান ও বিধিনিষেধে ভারসাম্য খোঁজা চলছে-

চীনে ২০১৮ সালে জন্ম হয় প্রথম "জিন-সম্পাদিত শিশু"। ঘটনা বৈজ্ঞানিক ইতিহাসে আলোড়ন তোলে, নৈতিক সংকটও জাগায়।
 

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও WHO এখন 'germline editing'-অর্থাৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্মে প্রভাব ফেলতে পারে এমন জিন পরিবর্তন-এই ধরণের গবেষণার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
 

CRISPR কি বাংলাদেশে ব্যবহার হচ্ছে?

বাংলাদেশে এখনও এটি গবেষণার পর্যায়ে, কিন্তু কৃষি গবেষণাগারে ধান ও মাছের জিন-সম্পাদনার কিছু পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে চিকিৎসাক্ষেত্রে এখনো এটি সীমিত এবং নিয়ম-নীতি গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

CRISPR আমাদের দিয়েছে এমন এক প্রযুক্তি, যা চাইলে আমাদের দুর্বলতা দূর করতে পারে। কিন্তু এটিই যদি অহংকার ও নিয়ন্ত্রণহীনতার রূপ নেয়, তাহলে একদিন হয়তো আমরা হারিয়ে ফেলবো নিজেদের পরিচয়ই। জিন পরিবর্তনের এই খেলায় উন্নতির সঙ্গে থাকতে হবে দায়িত্ব, আর গবেষণার পাশে থাকতে হবে নৈতিক বোধ। নইলে এই 'কাঁচি' দিয়ে ভবিষ্যতের আলো নয়, নিজেদের মূলোচ্ছেদও ঘটিয়ে ফেলতে পারি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ