অসুস্থতা কষ্ট নয় বরং রহমতের পরশ-ইসলামি শিক্ষা থেকে জীবন বদলে দেওয়া অনুপ্রেরণা!

অসুস্থতা কষ্ট নয় বরং রহমতের পরশ-ইসলামি শিক্ষা থেকে জীবন বদলে দেওয়া অনুপ্রেরণা!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

অসুস্থতা মানেই কি দুর্ভাগ্য? শরীর যখন ভেঙে পড়ে, ব্যথা যখন প্রতি রাতে ঘুম কাড়ে, তখন মনে হয় জীবন যেন থেমে গেছে। তীব্র ব্যথা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বারবার রিপোর্ট-এইসবের ভেতরে মানুষ ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে মানসিকভাবে। এই ভাঙনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খায় বারবার- "কেন আমি?" "আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন না?" "আর কত কষ্ট সহ্য করতে হবে?" "আমার কি পাপের ফল?" এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ইসলাম খুব সুন্দরভাবে দেয়। অসুস্থতা ইসলামে শুধু শারীরিক দুর্বলতা নয়, এটি একটি পরীক্ষাও-যার মধ্যে আছে ক্ষমা, নিয়ামত এবং আত্মার পরিশুদ্ধি।

ইসলামের দৃষ্টিতে অসুস্থতা: পাপ মোচনের অপূর্ব সুযোগ-

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

"মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।"  (সহিহ বুখারি ৫৬৪১ )

অর্থাৎ,  আপনি যখন অসুস্থ থাকেন, তখন আপনার প্রতিটি ব্যথা আল্লাহর কাছে 'মূল্যবান'। প্রতিটি কষ্ট একটি একটি করে পূর্বের গুনাহ ঝরিয়ে দেয়, যেমন শরীর ঘাম ঝরায়। এমনকি মাথাব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্টের মতো 'সাধারণ' অসুস্থতাও দুনিয়ার বোঝা হালকা করে। এটি শুধু সান্ত্বনা নয়, বরং একটি বিশ্বাসযোগ্য আত্মিক তত্ত্ব, যা আপনাকে হতাশা থেকে রক্ষা করে।
 

আল্লাহর রহমত কষ্টের আড়ালে লুকিয়ে থাকে-

অনেক সময় আমরা ভাবি-"আল্লাহ কেন আমাকে সুস্থ করেন না?" অথচ কুরআন আমাদের বলে:

"وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ"
 

"আমি অসুস্থ হলে তিনিই আমাকে আরোগ্য দেন।"
  (সূরা আশ-শুআরা ২৬:৮০)

এখানে. শব্দটি 'শাফি' (আরোগ্যদাতা)। আল্লাহ নিজেই আমাদের আরোগ্যদাতা। ডাক্তার, ওষুধ-all are means, মূলত আরোগ্য আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এই বিশ্বাস নিজের মধ্যে রাখলে-মন শান্ত হয়, অস্থিরতা কমে, মনোবল বাড়ে।
 

অসুস্থতায় মানসিক ভেঙে পড়া স্বাভাবিক-তবে  সেখানেই আল্লাহর কাছে যাওয়ার সুযোগ।

মানুষ দুর্বল। শরীরের সঙ্গে মনও ভেঙে পড়ে। কিন্তু এটাই সেই মুহূর্ত-যখন মানুষ সবচেয়ে বেশি আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন, তাকে তিনি দুঃখ-কষ্টে পতিত করেন।" 
[সহীহ বুখারী - 5645 ] 
 

অর্থাৎ, এই কষ্ট নিছক শাস্তি নয়-বরং আল্লাহ আপনার মধ্যে এমন কিছু দেখেছেন, যার মাধ্যমে আপনি আরও ভালো হয়ে উঠবেন।

সান্ত্বনার কিছু ছোট দোয়া:
 

اللَّهُمَّ اشْفِنِي شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

"হে আল্লাহ! আমাকে এমন আরোগ্য দাও, যাতে কোনো ব্যথা না থাকে।"

حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

"আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই উত্তম নির্ভরযোগ্য।"

এই দোয়াগুলো শুধু মুখে উচ্চারণ করলেই হবে না-মনে বিশ্বাস থাকতে হবে। আপনি যখন হৃদয় দিয়ে বলেন "আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট"—তখন মানসিক চাপ অনেকটাই হালকা হয়ে যায়।


অসুস্থ অবস্থায় যেভাবে সময়কে ইবাদতে রূপান্তর করবেন-

শরীর যখন দুর্বল, তখন ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু শুয়ে থাকা, ইন্টারনেটে সময় নষ্ট না করে-এই সময়টাকে আপনার আত্মার শক্তিতে রূপ দিন।

⇨ ইস্তিগফার করুন:"আস্তাগফিরুল্লাহ" বারবার বলুন। এটি গুনাহ মোচনের দরজা।
⇨  কুরআনের অনুবাদ পড়ুন: চোখে আলো না থাকলে শুনুন। এই সময়ে কুরআনের ভাষ্য আপনাকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তুলবে।
⇨ সুস্থতা ও ধৈর্যের দোয়া করুন।
⇨ আল্লাহর গুণবাচক নাম স্মরণ করুন: যেমন: আল-শাফি (আরোগ্যদাতা), আর-রাহিম (পরম দয়ালু), আল-আলিম (সব জ্ঞানী), আল-বাসির (সব কিছু দেখেন)।

⇨ নিজেকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিন-"আজ আমি কষ্টে আছি, কাল সুস্থ হতে পারি।
আর যদি না-ও হই, আমার কষ্ট বৃথা নয়-আল্লাহর কাছে প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য আছে।
আল্লাহ বলেন:

"إِنَّ مَعَ ٱلْعُسْرِ يُسْرًا"
 

"নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে রয়েছে স্বস্তি।"  (সূরা ইনশিরাহ ৯৪:৬)

এ আয়াতে আল্লাহ বারবার বলেছেন-"কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি"। এটি শুধু ভবিষ্যতের আশাবাদ নয়, বরং বর্তমানের প্রতিশ্রুতি।

অসুস্থতা যখন আসে, তখন আমরা শুধু ওষুধ খুঁজি। কিন্তু আত্মার ওষুধও দরকার। আল্লাহ আমাদের জন্য কষ্টকে অভিশাপ নয়, বরং একরকম নেয়ামত বানিয়েছেন। এই সময়গুলোতে যদি আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি, ধৈর্য ধরি, দোয়া করি-তাহলে শুধু সুস্থতাই নয়, আত্মিক উন্নতি ও জান্নাতের পথও সুগম হয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ