অভ্যাসে না, বিরতিতেই আছে শক্তি! জানুন কীভাবে 'গ্যাপ-বেইসড লার্নিং' বাড়ায় মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা প্রায়ই শুনে থাকি-"অবিরাম পড়ো, তাহলেই ফল আসবে!" কিন্তু আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। গ্যাপ-বেইসড লার্নিং বা 'বিরতি-ভিত্তিক শেখার কৌশল' এখন শিক্ষাবিজ্ঞানে এক আলোচিত পন্থা, যা জানাচ্ছে-বিরতি নেওয়া কেবল আরাম নয়, বরং শেখার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কী এই গ্যাপ-বেইসড লার্নিং?
গ্যাপ-বেইসড লার্নিং বলতে বোঝানো হয় এমন একটি শেখার প্রক্রিয়া, যেখানে পড়ালেখার মাঝে ইচ্ছাকৃতভাবে ছোট ছোট বিরতি রাখা হয়, যাতে তথ্য মস্তিষ্কে আরও ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়।
এই কৌশলটির ভিত্তি রয়েছে মস্তিষ্কের সিন্যাপটিক প্লাস্টিসিটি এবং মেমোরি কনসোলিডেশন প্রক্রিয়ার ওপর। সহজভাবে বললে, শেখার পরপরই যদি মস্তিষ্ক কিছু সময় 'আরাম' পায়, তাহলে নতুন শেখা তথ্যগুলো সঠিকভাবে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়।
বিজ্ঞান কী বলছে?
"Spacing Effect" নামক এক সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষাতত্ত্ব অনুযায়ী, যখন শেখার সময়কে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং মাঝে মাঝে বিরতি রাখা হয়, তখন দীর্ঘমেয়াদে মনে রাখার দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে।
University of Edinburgh-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তথ্য শেখার মাঝে ১০–২০ মিনিটের বিরতি নেয়, তাদের recall accuracy প্রায় ২০–২৫% বেশি হয়।
মস্তিষ্ক যখন বিশ্রাম নেয়, তখন Default Mode Network (DMN) নামে একধরনের নিউরাল সিস্টেম সক্রিয় হয়, যা তথ্য পুনঃসংগঠনে সাহায্য করে। এ সময়েই আমরা শেখা জিনিসকে নিজেদের ভাষায়, অভিজ্ঞতায় রূপান্তর করি।
যেভাবে বিরতি নিলে মস্তিষ্ক বেশি উপকৃত হয়-
১. পমোডোরো কৌশল (Pomodoro Technique):
২৫ মিনিট পড়া + ৫ মিনিট বিরতি। প্রতি চার সেশনের পর দীর্ঘ (১৫-২০ মিনিট) বিরতি।
এই রুটিন ব্রেইনের মনোযোগ চক্রকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
২. একঘেয়েমি কাটাতে 'অ্যাকটিভ রেস্ট':
বিরতির সময় চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা, হালকা হাঁটাহাঁটি বা মেডিটেশন করা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ায়। এর ফলে স্নায়ু আরও কার্যকরভাবে কাজ করে।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম = শক্তিশালী স্মৃতি:
রাতে ৬–৮ ঘণ্টার ঘুম শেখা তথ্যকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশি শিক্ষাব্যবস্থার প্রেক্ষাপট-
আমাদের অনেক সময়ই মনে হয় যে বিরতি মানেই সময় নষ্ট। কিন্তু এ ধারণা বদলানো জরুরি। বিরতিকে যদি "শেখার অংশ" হিসেবে বিবেচনা করা যায়, তবে পরীক্ষার আগের দৌড়ঝাঁপ নয়-বরং ধীরে-স্থিরে শেখার মাধ্যমে প্রকৃত 'বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ' ঘটানো সম্ভব।
গ্যাপ-বেইসড লার্নিং আসলে শেখাকে আরও বিজ্ঞানসম্মত, টেকসই ও চাপমুক্ত করে তোলে। অবিরাম না পড়ে, মাঝে বিরতি নিয়ে পড়লেই মস্তিষ্ক শেখা তথ্যকে আরও গভীরে ধারণ করে। শুধু পরিশ্রম নয়, স্মার্ট রেস্ট-ই হতে পারে আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি।
সুতরাং, শেখার মাঝে বিশ্রাম নিতে ভয় পাবেন না-বরং এটিকেই আপনার নতুন শেখার কৌশল করে তুলুন। মনে রাখবেন, জ্ঞান অর্জনে বিরতি মানে থেমে যাওয়া নয়, বরং এগিয়ে যাওয়ার নতুন গতি!
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।