ভালোবাসা-আবেগ নাকি হরমোনের হ্যালুসিনেশন? বিজ্ঞান যা বলছে, শুনলে অবাক হবেন!

ভালোবাসা-আবেগ নাকি হরমোনের হ্যালুসিনেশন? বিজ্ঞান যা বলছে, শুনলে অবাক হবেন!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ভালোবাসা-একটি শব্দ, যা শোনার মাত্রই হৃদয়ে উষ্ণতা জাগায়। প্রেম, আকর্ষণ, মমতা-এই সব অনুভূতি মিলেই ভালোবাসার এক অপূর্ব অনুভূতি তৈরি হয়। তবে শুধু অনুভূতি বললেই কি ভালোবাসার পুরো চিত্র পাওয়া যায়? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, ভালোবাসা কেবল অনুভূতির নাম নয়, এটি একটি জটিল নিউরোকেমিক্যাল রিঅ্যাকশন।

নিউরোকেমিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা-

ভালোবাসার সময় মস্তিষ্কে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ (নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন) সৃষ্ট হয়, যা আমাদের অনুভূতি ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

ডোপামিন: সুখ, আনন্দ ও পুরস্কারের অনুভূতি তৈরি করে। ভালোবাসার শুরুতে বিশেষ করে ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার কারণে আমরা সেই ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হই ও তার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।

অক্সিটোসিন: পরিচিতি ও বন্ধুত্বের বন্ধন গড়তে সাহায্য করে। এটি স্নেহ, বিশ্বাস ও সংহতির অনুভূতি বাড়ায়, যেমন মা-বাবার সন্তানপ্রতি ভালোবাসায়।

সেরোটোনিন: মেজাজ স্থিতিশীল করে এবং ভালোবাসায় মনোযোগ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এন্ডোরফিন: স্বাভাবিক ব্যথানাশক, যা ভালোবাসায় আরামদায়ক ও সান্ত্বনাদায়ক অনুভূতি দেয়।
 

মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা-

ভালোবাসা শুধু নিউরোকেমিক্যাল পরিবর্তন নয়, এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক প্রক্রিয়া। মানুষের মস্তিষ্কের কগনিটিভ (জ্ঞানগত), ইমোশনাল (আবেগীয়) এবং বিহেভিয়ারাল (আচরণগত) উপাদান ভালোবাসার গঠন করে।

⇨ আকর্ষণ ও অনুরাগ:
প্রথম স্তরে মানুষ আকৃষ্ট হয় শরীরের বৈশিষ্ট্য, আচরণ, বা মানসিক গুণাবলীর প্রতি। আকর্ষণকে সাধারণত 'লাস্টিং ফান্ডেশন' হিসেবে ধরা হয়।
 

⇨ ভরসা ও সুরক্ষা:
ভালোবাসার দ্বিতীয় ধাপে আসে বিশ্বাস ও নিরাপত্তার অনুভূতি, যা সম্পর্ককে মজবুত করে। এটি মানসিক নিরাপত্তা ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গভীরতর হয়।
 

⇨ সম্পর্কের স্থায়িত্ব ও আন্তঃসম্পর্ক:
ভালোবাসা তখন পূর্ণতা পায় যখন দুই মানুষ একে অপরের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে, মানসিক সমর্থন ও একাত্মবোধ তৈরি হয়।

 

ভালোবাসা ও মস্তিষ্কের অংশবিশেষ

লিম্বিক সিস্টেম: আবেগ ও স্মৃতির কেন্দ্র। ভালোবাসার সময় এখানে সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

⇨ কোর্টেক্স: চিন্তাভাবনা ও বিচার-বিবেচনার কেন্দ্র। এটি ভালোবাসাকে যৌক্তিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়ন্ত্রণ করে।

⇨ অ্যামিগডালা: আবেগীয় স্মৃতি ও ভয় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসায় এটি চাপ কমাতে সাহায্য করে।
 

ভালোবাসার ধাপসমূহ

মনস্তত্ত্ববিদরা ভালোবাসাকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন-

⇨ লোভ ফেইজ (Lust Phase): শারীরিক আকর্ষণ ও কামনার প্রাথমিক পর্যায়।

⇨ অ্যাট্রাকশন ফেইজ (Attraction Phase): মনস্তাত্ত্বিক আকর্ষণ ও উত্তেজনার সময়।

⇨ কমিটমেন্ট ফেইজ (Commitment Phase): দীর্ঘস্থায়ী বন্ধন ও সম্পর্ক গড়ার ধাপ।

প্রতিটি পর্যায়ে নিউরোকেমিক্যাল ও মনস্তাত্ত্বিক উপাদান ভিন্ন মাত্রায় কাজ করে।

 

মনস্তাত্ত্বিক উপকারিতা ও প্রভাব

ভালোবাসা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে-এটি হতাশা, উদ্বেগ কমায় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা আনে। ভালোবাসার অভাবের ফলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বৃদ্ধি পায়, যা শরীর ও মস্তিষ্কের নানা সমস্যা ডেকে আনে। অন্যদিকে ভালোবাসার সম্পর্ক মানসিক চাপ হ্রাস করে, আত্মবিশ্বাস ও সুখ বোধ বৃদ্ধি করে।
 

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব-

ভালোবাসা কেবল জৈবিক নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটেও নির্ভরশীল। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভালোবাসার ধারণা, প্রকাশ ও মূল্যায়ন ভিন্ন। এই ভিন্নতা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতাকেও প্রভাবিত করে।

ভালোবাসা শুধু অনুভূতির খেলা নয়, এটি জৈবিক, মানসিক ও সামাজিক এক জটিল প্রক্রিয়া। এটি নিউরোকেমিক্যাল পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরকে প্রভাবিত করে, আর মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের ব্যক্তিত্ব ও সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়।

বিজ্ঞান ও মনস্তত্ত্ব মিলেই ভালোবাসাকে বুঝতে সাহায্য করে, যা মানুষের জীবনকে অর্থবহ ও সুন্দর করে তোলে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ