খুলনা আইনজীবী সমিতির তহবিল থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ

খুলনা আইনজীবী সমিতির তহবিল থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। সমিতির সর্বশেষ অডিট প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে তৎকালীন সভাপতি ও খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলামসহ তৎকালীন নির্বাহী কমিটির একাধিক আইনজীবীর নাম উঠে আসে। এ ঘটনায় মানিস্যুট মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমিতির বিশেষ সাধারণ সভা।

বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত বিশেষ সাধারণ সভায় সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট নূরুল হাসান রুবা ৭৮ পৃষ্ঠার অডিট প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু। তিনি উপস্থিত সদস্যদের কাছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় জানতে চাইলে, সর্বসম্মতিক্রমে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেকের প্রস্তনায় ১১ সদস্যের সিনিয়র সিভিল আইনজীবীর একটি প্যানেল গঠন করে মামলার আরজি প্রস্তুতের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ২৬ ধরনের অনিয়ম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, ভুয়া বিল ও ভাউচার তৈরি, অনুমোদনবিহীন বিনিয়োগ, ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান ও ফেরতের প্রমাণ না থাকা, অফিস রক্ষণাবেক্ষণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নির্মাণকাজের নামে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো ইত্যাদি। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, সমিতির নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে কোটি কোটি টাকার লেনদেন এবং ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের দিন ও পরদিন ব্যাংক হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অনুমোদন ছাড়া একাধিক এফডিআর ভেঙে নগদ উত্তোলন ও নতুন এফডিআর খোলা হয়েছে, যার কোনো নথি নেই। ব্যক্তিগত কাজে কয়েকজন সদস্য লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন, কিন্তু ফেরতের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। ব্যালেন্স শিটে প্রদর্শিত নগদ অর্থ ও ব্যাংক স্টেটমেন্টের হিসাব মেলেনি। অনেক ক্ষেত্রে নথি গোপন রাখা হয়েছে এবং অডিট টিমকে প্রয়োজনীয় কাগজ সরবরাহ করা হয়নি।

প্রাথমিক হিসাবে আত্মসাতের পরিমাণ ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৯ টাকা ধরা হলেও, প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, অসম্পূর্ণ বা লুকানো নথি পরীক্ষা করলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। এই ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আইনগত তদন্ত শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে বাৎসরিক অডিট বাধ্যতামূলক করা, অনলাইন অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম চালু এবং আর্থিক লেনদেন সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের কেউই গণমাধ্যমে মন্তব্য করেননি। তবে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামসহ তৎকালীন কমিটির অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। ৬ আগস্টও ব্যাংক লেনদেন চলেছে কীভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সদস্যরা।

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রভাবশালী আইনজীবী সংগঠন, যার সদস্য সংখ্যা ১,২০০-এর বেশি। এ ঘটনায় আইনজীবী মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ