সর্দি-কাশির সময় যে ফলগুলো খেলে বাড়ে বিপদ-বিজ্ঞান বলছে এসব এড়িয়ে চলুন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রকৃতি যতটাই অনন্য তার উপহার ফল ততটাই উপকারী। কিন্তু উপকার যেমন নির্ভর করে ফলের পুষ্টিগুণের উপর, তেমনি নির্ভর করে শরীরের অবস্থাও। বিশেষ করে ঠাণ্ডা লাগা, গলা ব্যথা বা ভাইরাল ইনফেকশনের সময় কিছু ফল শরীরের জন্য হয়ে উঠতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে 'সর্দি-কাশিতে ফল খাওয়া ঠিক না ভুল' এ প্রশ্নটি কেবল কুসংস্কার নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠাণ্ডা-জনিত অসুস্থতার সময় কিছু নির্দিষ্ট ফল দেহের মিউকাস উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা সর্দি, গলা ব্যথা বা কাশিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সেইসঙ্গে কিছু ফল ঠাণ্ডা প্রকৃতির হওয়ায় শরীরে ঠাণ্ডার প্রকোপ আরও তীব্র করতে পারে।
যে ফলগুলো ঠাণ্ডায় এড়িয়ে চলা ভালো
১. কলা (Banana):
কলার মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম ও ফাইবার, যা স্বাভাবিক সময়ে হজমে সহায়ক হলেও ঠাণ্ডার সময় এটি শরীর ঠাণ্ডা করে দিতে পারে। একইসাথে এটি সাইনাসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
২. কমলা ও সাইট্রাসজাতীয় ফল:
কমলা, মাল্টা, লেবু প্রভৃতি ফল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C সরবরাহ করে ঠিকই, কিন্তু যখন গলা ব্যথা বা ইনফ্লেমেশন থাকে, তখন এসিডিক প্রকৃতির জন্য তা গলায় জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সুস্থ অবস্থায় এদের গুরুত্ব অপরিসীম।
৩. তরমুজ ও শসা জাতীয় ঠাণ্ডা ফল:
তরমুজ বা শসার মতো ফল শরীরকে ঠাণ্ডা করে, যা গ্রীষ্মে আরাম দিলেও সর্দি-কাশির সময় শরীরকে আরও দুর্বল করতে পারে। এই ধরনের ফল ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার বদলে ঠাণ্ডার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে।
কেন এ ধরনের ফল পরিহার জরুরি?
ঠাণ্ডা লাগলে আমাদের শরীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে ফেলে। এ সময় মিউকাস বা শ্লেষ্মা নিঃসরণ বেড়ে যায়। মিউকাস আসলে ভাইরাস বা জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়ক হলেও অতিরিক্ত মিউকাস নিঃসরণ আবার নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, সাইনাস ও কাশির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু নির্দিষ্ট ফল এই মিউকাস নিঃসরণকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এছাড়া এসিডিক ও ঠাণ্ডা ফল ঠাণ্ডার সময়ে ইনফ্লেমেশন বা সংবেদনশীল টিস্যুগুলোকে আরও জ্বালাময় করে তোলে। তার ফলে গলা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বা কাশি শুকনো থেকে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে উঠতে পারে, যা আবার ব্রঙ্কাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
তাহলে কী খাওয়া উচিত এই সময়ে?
সর্দি বা ঠাণ্ডা লাগলে এমন ফল বেছে নিতে হবে যা শরীর উষ্ণ রাখে ও মিউকাস নিয়ন্ত্রণ করে।
যেমন:
⇨ পাকা পেঁপে
⇨ বেদানা
⇨ আপেল (রুম টেম্পারেচারে)
⇨ সিদ্ধ বা হালকা গরম করে দেওয়া নরম ফল
⇨ এছাড়া ঠাণ্ডার সময় ফল খাওয়ার চেয়ে ফল-ভিত্তিক গরম পানীয় (যেমন আদা-লেবুর উষ্ণ পানীয়) বেশি উপকারী হতে পারে।
সব ফল সব সময়ের জন্য উপকারী নয়। ঠাণ্ডা লাগার সময় শরীরের প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া ভিন্নভাবে কাজ করে, তাই এমন কিছু খাদ্যবস্তু গ্রহণ জরুরি যা শরীরকে উষ্ণতা দেয় এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ঠাণ্ডার সময় 'ঠাণ্ডা ফল' এড়িয়ে চলা শুধুই প্রাচীন পরামর্শ নয়, এটি বিজ্ঞানের আলোকে এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যচেতনা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।