রাতের ঘুম উধাও, শরীরে খোঁচা খোঁচা ব্যথা? জেনে নিন আপনি 'রেডিকুলোপ্যাথি'তে আক্রান্ত কি না!

রাতের ঘুম উধাও, শরীরে খোঁচা খোঁচা ব্যথা? জেনে নিন আপনি 'রেডিকুলোপ্যাথি'তে আক্রান্ত কি না!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঘাড় থেকে কোমর, পিঠ থেকে হাত-পা যে স্নায়ুগুলো শরীরের চলাচল ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে, সেই স্পাইনাল নার্ভগুলো যদি চাপে পড়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন শরীরে দেখা দিতে পারে এক রহস্যজনক ও যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা রেডিকুলোপ্যাথি।

রেডিকুলোপ্যাথি আসলে কী?

রেডিকুলোপ্যাথি হলো মেরুদণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা নার্ভ রুটগুলো যখন সংকুচিত, চাপে পড়া বা ইনফ্লেমড হয়, তখন যে স্নায়বিক লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সেটাই এই রোগ। এটাকে অনেক সময় সাধারণ ভাষায় "পিনচড নার্ভ" হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

এই অবস্থা পিঠ, ঘাড়, বা কোমরের কোনো স্পাইনাল ডিস্ক থেকে বের হওয়া নার্ভে চাপ পড়লে তৈরি হয়, যার ফলে আক্রান্ত অঞ্চলে ব্যথা, ঝিঝি, অবশভাব, বা দুর্বলতা দেখা দেয়।

 

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় কোন জায়গায়?

রেডিকুলোপ্যাথি মূলত তিনটি স্পাইনাল অঞ্চলে বেশি দেখা যায়:

১। সারভাইক্যাল (ঘাড়) – ঘাড়ের নার্ভে সমস্যা হলে হাত, কাঁধ, এমনকি আঙুল পর্যন্ত অবশভাব বা ব্যথা হতে পারে।
 

২। থোরাসিক (বুকে-পিঠে) – তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেলেও, মাঝে মাঝে বুকে বা পাঁজরের চারপাশে ব্যথার সূত্রপাত হয় এই অঞ্চল থেকেই।
 

৩। লাম্বার (কোমর) – সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এই অংশে, যেখানে কোমর থেকে পায়ের দিকের নার্ভগুলো চাপে পড়ে ব্যথা বা দুর্বলতা দেখা দেয়।

 

যে  কারণে হয় রেডিকুলোপ্যাথি-

⇨ হার্নিয়েটেড ডিস্ক: ডিস্ক থেকে জেলির মতো পদার্থ বেরিয়ে গিয়ে নার্ভে চাপ দেয়।

⇨ বোন স্পার (হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি): বয়সজনিত হাড়ের পরিবর্তন নার্ভে ঘর্ষণ বা চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

⇨ ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিস্কের স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে নার্ভে চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

⇨ ট্রমা বা ইনজুরি: দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ড আঘাত পেলে তাৎক্ষণিক রেডিকুলোপ্যাথি দেখা দিতে পারে।
 

যেভাবে বোঝা যাবে?

⇨ আক্রান্ত অঞ্চলে ব্যথা (কাঁধ বা পিঠে গাঁথানো ব্যথার মতো)

⇨ পেশিতে দুর্বলতা বা ভারী লাগা

⇨ ঝিঝি, অবশভাব, বা পিন চিমটি দেওয়া অনুভূতি

⇨ হাঁটাচলায় ভারসাম্য হারানো (কোমরের রেডিকুলোপ্যাথিতে)

⇨ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বা স্পর্শের অনুভূতিও কমে যেতে পারে
 

চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা:

সবার আগে প্রয়োজন সঠিক ডায়াগনোসিস। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে:

⇨ MRI বা CT Scan – নার্ভ কোন জায়গায় চাপে পড়েছে তা নির্ধারণে
⇨ Electromyography (EMG) – নার্ভের কার্যক্ষমতা পরিমাপে
 

চিকিৎসায় সাধারণত ব্যবহৃত হয়:

⇨ বিশ্রাম ও ফিজিওথেরাপি

⇨ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ

⇨ কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ইনজেকশন

⇨ জটিল বা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে সার্জারিও প্রয়োজন হতে পারে
 

রেডিকুলোপ্যাথি একটি সাধারণ কিন্তু অবহেলিত স্নায়বিক সমস্যা, যা সময়মতো ধরা না পড়লে স্থায়ী দুর্বলতা পর্যন্ত তৈরি করতে পারে। শরীরে যদি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে ব্যথা, অবশভাব বা দুর্বলতা দীর্ঘদিন থাকে, তখন এটিকে "সাধারণ ব্যথা" ভেবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। স্পাইনাল নার্ভ সংকট মানেই পুরো শরীরের ভারসাম্যে বিঘ্ন। তাই স্নায়ুর সংকেত উপেক্ষা নয় বোঝার চেষ্টা করুন, চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ