মিশরের পিরামিড তৈরির পিছনে কি আসলেই এলিয়ানদের হাত রয়েছে!!

মিশরের পিরামিড তৈরির পিছনে কি আসলেই এলিয়ানদের হাত রয়েছে!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মিসরের গিজা প্রান্তরের পিরামিডগুলো আজও দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর প্রাচীন বিস্ময়ের প্রতীক হয়ে। প্রায় ৪৫০০ বছর আগে নির্মিত এই বিশাল কাঠামোগুলো নিয়ে মানুষের কৌতূহল কমেনি আজও। তবে এক প্রশ্ন বারবার ঘুরে ফিরে আসে এত নিখুঁত নির্মাণ, এত ভারী পাথর, এত জ্যামিতিক নিখুঁততা এসব কি আদৌ প্রাচীন মানুষ করতে পারত, নাকি সত্যিই ভিনগ্রহবাসীরা এসে দিয়েছিল সাহায্য? এই ধারণা যতটা রোমাঞ্চকর, ততটাই সন্দেহজনক। আর বিজ্ঞানের উত্তর একেবারেই বাস্তবভিত্তিক।

এলিয়েন তত্ত্ব কোথা থেকে এলো?

'অ্যানসিয়েন্ট অ্যাস্ট্রোনট থিওরি' বা 'প্রাচীন ভিনগ্রহবাসী তত্ত্ব' অনুযায়ী, প্রাচীন পৃথিবীর কিছু উন্নত নির্মাণ যেমন পিরামিড, মাচু পিচু বা স্টোনহেঞ্জ এসব নাকি মানুষের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই দাবি করা হয়, হয়ত উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন কোনো ভিনগ্রহীয় প্রাণী এসে সাহায্য করেছিল।

১৯৬০-এর দশকে এই তত্ত্ব জনপ্রিয়তা পায় এরিক ফন ডেনিকেনের লেখা Chariots of the Gods? বই থেকে। এরপর টিভি অনুষ্ঠান, ইউটিউব চ্যানেল আর সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে ধারণাটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা, পিরামিড নির্মাণে ভিনগ্রহবাসীর প্রয়োজন পড়েনি এই ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ ও প্রকৌশলবিদেরা একমত। কারণ এখন পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, পিরামিড প্রাচীন মিশরীয়দের প্রযুক্তি, পরিকল্পনা, কল্পনাশক্তি ও শ্রমের ফল।

গিজার মহাপিরামিড বানানো হয়েছিল প্রায় ২৩ লাখ চুনাপাথরের ব্লক দিয়ে, প্রতিটি ব্লকের ওজন গড়ে ২.৫ টন। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, মিশরীয়রা কাঠের রোলার, তেল দিয়ে তৈলাক্ত করা স্কিড ও ঢালু র‌্যাম্প ব্যবহার করে পাথরগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেত।

 

নির্মাণ কৌশল: মানুষ কীভাবে সম্ভব করল?

১. র‌্যাম্প থিওরি:
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পিরামিডের এক পাশে ঢালু মাটি বা ইট দিয়ে একটি 'র‌্যাম্প' তৈরি করা হতো। পাথর ওই র‌্যাম্পের উপর দিয়ে টেনে তোলা হতো।
 

২। পরিকল্পিত শ্রম ব্যবস্থাপনা:
ধারণা করা হতো যে হাজার হাজার ক্রীতদাস এই কাজ করতেন, কিন্তু আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে এরা ছিলেন প্রশিক্ষিত শ্রমিক, স্থায়ী বসবাসকারী, যাদের খাবার, চিকিৎসা, বিশ্রামের সুবিধাও ছিল।
 

৩। জ্যামিতিক জ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা:
পিরামিড নির্মাণে অত্যন্ত নিখুঁত পরিমাপ ও দিকনির্দেশনার ব্যবহার ছিল। উত্তর-দক্ষিণ অক্ষের সাথে প্রায় নিখুঁতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ গিজার পিরামিডগুলো, যা প্রমাণ করে মিশরীয়দের জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যামিতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছিল।
 

এলিয়েন তত্ত্বের সমালোচনা কেন জরুরি?

এমন ধারণা যে ভিনগ্রহবাসী এসে পিরামিড বানিয়ে দিয়েছে, তা কেবল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই খাটো করে না এটি প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বুদ্ধিমত্তা, শ্রম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেও অসম্মান করে।

অফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা বা এশিয়ার প্রাচীন জাতিগুলোর নির্মাণশৈলীকে "মানবীয় ক্ষমতার বাইরে" বলে দাবি করা এক ধরনের সাংস্কৃতিক পক্ষপাতদুষ্টতা। এটা যেন এক রকম ঔপনিবেশিক মানসিকতা, যেখানে পশ্চিমা ধারণা ছাড়া কিছুই যুক্তিসঙ্গত নয় এমন ভাবনারই প্রকাশ।

পিরামিড অবশ্যই এক বিস্ময়কর প্রযুক্তি ও নকশার নিদর্শন, যা সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু সে কারণেই তো এটি প্রমাণ করে মানুষের বুদ্ধি, কৌশল আর পরিশ্রমের অসাধারণতা।

এলিয়েন তত্ত্ব আমাদের কৌতূহল জাগাতে পারে, কিন্তু সত্যকে খুঁজে পেতে হলে আমাদের ভরসা রাখতে হবে প্রমাণে, গবেষণায়, আর মানুষের ইতিহাসে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ