৫জি কি আমাদের জীবনে ধ্বংস ডেকে আনছে? জেনে নিন বিস্তারিত

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রযুক্তির উন্নয়নের দৌড়ে যখন বিশ্ব দ্রুত ছুটে চলছে পঞ্চম প্রজন্মের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক বা ফাইভ-জির দিকে, তখন এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি প্রশ্ন ফাইভ-জি কি মানুষের শরীরের জন্য সত্যিই ক্ষতিকর? এই প্রশ্ন শুধু সাধারণ মানুষ নয়, উদ্বিগ্ন করে তুলেছে কিছু গবেষককেও। তবে উত্তরটা সরল নয়। কারণ বিজ্ঞানী মহল এখনও পুরোপুরি একমত নয়। কেউ বলছেন, এর প্রভাব খুবই সামান্য এবং মানবদেহের জন্য নিরাপদ। কেউ আবার বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার নিয়ে আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন।
ফাইভ-জি যেভাবে কাজ করে-
ফাইভ-জি মূলত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ বা তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে। এটি মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে, যা ৩০ গিগাহার্টজ থেকে ৩০০ গিগাহার্টজ পর্যন্ত বিস্তৃত। ফাইভ-জি তরঙ্গ তুলনামূলকভাবে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে চলে, ফলে ডেটা ট্রান্সফার অনেক দ্রুত হয়, কিন্তু এই উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিই অনেকের মনে শঙ্কা তৈরি করছে এই তরঙ্গ কি দেহকোষে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে?
মানবদেহে প্রভাব-
ইউভি (UV), এক্স-রে এবং গামা রশ্মির মতো কিছু তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ আয়নাইজিং ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো কোষের DNA ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম। তবে ফাইভ-জির তরঙ্গ নন-আয়নাইজিং, অর্থাৎ এর শক্তি এতটা বেশি নয় যে কোষের গঠন ভেঙে ফেলবে বা ক্যানসার সৃষ্টি করবে।
বিভিন্ন দেশের সরকারি গবেষণাগার ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা এ নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। তাদের মতে, এখন পর্যন্ত যে সকল ফাইভ-জি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, তা মানবদেহে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে এমন প্রমাণ মেলেনি।
তবুও শঙ্কা থেকে যায় কেন?
একটি বড় কারণ হলো ফাইভ-জির বিস্তার। অন্যান্য পূর্ববর্তী প্রযুক্তির তুলনায় অনেক বেশি ঘনত্বে টাওয়ার বা ছোট ছোট ট্রান্সমিশন ডিভাইস বসাতে হয়। ফলে শহরাঞ্চলে এই তরঙ্গের এক্সপোজার বেশি হতে পারে। এছাড়া, ফাইভ-জির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে এটি নিকটবর্তী কোষে কাজ করে, ফলে শরীরের কোষে এর দীর্ঘমেয়াদি কম মাত্রার তাপ বা স্ট্রেস পড়তে পারে কি না, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
বিজ্ঞান যা বলছে-
বর্তমান পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ফাইভ-জি প্রযুক্তি থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন এখনো সেই মাত্রায় পৌঁছায়নি যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তবে গবেষকরা এও মেনে নিচ্ছেন, দীর্ঘ সময় ধরে একটানা এক্সপোজার বা ভবিষ্যতে ফাইভ-জির আরও উচ্চ ক্ষমতার ব্যবহারে কী হতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনও আসেনি।
তবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ ছাড়া আতঙ্ক ছড়ানো যেমন অনৈতিক, তেমনি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত হওয়ার আগেই উদাসীন থাকা বিপজ্জনক।
ফাইভ-জি আমাদের জীবনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে চলেছে স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ, অটোনোমাস গাড়ি, স্মার্ট শহর সবকিছুতেই এর প্রভাব পড়বে। কিন্তু উন্নয়নকে গঠনমূলক করতে হলে দরকার তথ্যভিত্তিক সচেতনতা।
বিজ্ঞান বলছে ফাইভ-জি এখনো বিপজ্জনক নয়। তবে ভবিষ্যতের জন্য খোলা চোখে পর্যবেক্ষণ করাটাই হবে বিজ্ঞানের সত্যিকারের দায়িত্বশীলতা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।