পেটের অস্বস্তি আর শরীর কাঁপছে একসাথে? জানুন এটা কি শুধুই অ্যাসিডিটি, না শরীর দিচ্ছে ভয়ংকর কোনো বার্তা!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
রাতের খাবার একটু দেরি হলে বা একটু বেশি ঝাল খেলেই অনেকেই বলেন, "গ্যাস্ট্রিক ধরেছে।" কিন্তু যখন এই 'গ্যাস্ট্রিক' ভেতর থেকে পেট জ্বালিয়ে দেয়, আর সঙ্গে আসে কাপুনি, দুর্বলতা, বুক ধড়ফড়ানি তখন বিষয়টা আর সাধারণ থাকে না। আমাদের পেটে অ্যাসিডের ভারসাম্য ঠিক রাখে শরীরের একটি সুসংবদ্ধ প্রক্রিয়া। এই ভারসাম্য নষ্ট হলেই শুরু হয় সমস্যা। তবে সেটি কেবল অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিক আলসার নয়, হতে পারে আরও জটিল কিছু।
পেট জ্বালায় কাঁপুনি কেন হয়??
আমাদের হজমতন্ত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভেগাস নার্ভ নামে এক গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু। এটি মস্তিষ্ক থেকে পাকস্থলী, অন্ত্র, হৃদপিণ্ড, এমনকি ফুসফুস পর্যন্ত বিস্তৃত। অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন, পাকস্থলীর প্রদাহ বা গ্যাস্ট্রিক লাইনিং-এ ক্ষতের কারণে এই নার্ভ অতিমাত্রায় উত্তেজিত হলে, শরীরে দেখা দেয়:
১। ব্লাড প্রেসার হঠাৎ কমে যাওয়া
২। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
৩ হালকা কাঁপুনি বা ঝিমুনি
৪। হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
৫। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
একে বলে "Vasovagal Response", যেটি হজম সমস্যার পাশাপাশি স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
কেন এই সমস্যা হয়-মূল কারণগুলো:
১। খালি পেটে থাকা বা অনিয়মিত খাওয়া:
পাকস্থলীতে অ্যাসিড তো তৈরি হবেই কিন্তু খাবার না থাকলে তা পাকস্থলীর লাইনিং-এ ক্ষত সৃষ্টি করে।
২। অতিরিক্ত চা, কফি বা কোল্ড ড্রিঙ্কস:
এইসব পানীয়তে থাকা ক্যাফেইন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড অ্যাসিডিটি আরও বাড়িয়ে দেয়।
৩। টক ফল বা অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া:
টমেটো, আনারস, লেবুর রস এসব খাবার উচ্চ অ্যাসিডিক, যা হাইপারঅ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ায়।
৪। স্ট্রেস এবং ঘুমের অভাব:
Cortisol ও অ্যাড্রেনালিনের মতো হরমোন হজমে প্রভাব ফেলে পেট খারাপ লাগে, মুড খারাপ হয়, এমনকি শরীর কাঁপতেও পারে।
৫। Helicobacter pylori (H. pylori) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ:
এটি পাকস্থলীর মিউকাস লেয়ার নষ্ট করে ফেলে, যার ফলে গভীর জ্বালা ও ক্ষত হয়। অনেক সময় বমি, রক্ত অথবা কালো মল দেখা যায়।
৬। ধূমপান ও অ্যালকোহল:
এরা পাকস্থলীর রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেয়, হজমে বাধা সৃষ্টি করে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়ায়।
পেট জ্বালায় কাঁপুনি যেসব রোগের ইঙ্গিত-
১। গ্যাস্ট্রিক গ্যাংগ্রিন (rare): পাকস্থলীতে ইনফ্লেমেশন বেশি হলে শরীর পুরোপুরি রেসপন্ড করে ঠান্ডা কাপুনি দিয়ে।
২। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): পেটের অ্যাসিড যখন বারবার খাদ্যনালীর ওপর উঠে আসে।
৩। পেপটিক আলসার: পাকস্থলীর দেওয়ালে ক্ষত হয়ে গ্যাস্ট্রিক রক্তপাতের ঝুঁকি তৈরি করে।
৪। ফুড পয়জনিং: বিষাক্ত খাবার খেলে পেট জ্বালা, ডায়রিয়া ও কাপুনি একত্রে হতে পারে।
৫। প্যানক্রিয়াটাইটিস (পাকস্থলী নয়, প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ): পেটের ডান পাশ বা মাঝ বরাবর প্রচণ্ড ব্যথা হয়, সঙ্গে শরীর কাঁপে।
করনীয় :
১। খাবার সময়ের প্রতি কঠোর নিয়ন্ত্রণ:
দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া অ্যাসিড রিফ্লাক্স ঠেকাতে সবচেয়ে কার্যকর।
২। স্মার্ট খাবার বাছাই করুন:
ভাত, দুধের ছানা, ইসবগুলের ভুসি, কলা, ভাতের মাড়, সুজি, সেদ্ধ সবজি—এগুলো পেট ঠান্ডা রাখে ও অ্যাসিড শোষণ করে।
৩। খাবারের পর চলাফেরা:
খেয়ে শুয়ে পড়লে খাদ্যনালীতে অ্যাসিড উঠে যায়। অন্তত ৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করাই ভালো।
৪। ঘরোয়া মিশ্রণ:
– এক চিমটে জিরা গুঁড়ো + সামান্য মধু + হালকা গরম পানি
– ১ চা চামচ ঘোল + কাঁচা ধনে পাতা কুচি + একটু বিট লবণ
৫। ঘনঘন পানি না খেয়ে ছোট ছোট চুমুকে পান করুন:
এতে পাকস্থলীর অ্যাসিড পাতলা হয়, কিন্তু হজম প্রক্রিয়া নষ্ট হয় না।
চিকিৎসা জরুরি কখন:
⇨ এক সপ্তাহের বেশি উপসর্গ স্থায়ী হলে
⇨ বমির সঙ্গে রক্ত গেলে
⇨ কালো পিচ্ছিল মল হলে
⇨হঠাৎ অজ্ঞান বা প্রচণ্ড মাথা ঘোরা হলে
⇨ খাওয়ার ইচ্ছা একেবারে কমে গেলে
পেটের জ্বালা আর গ্যাসকে অনেকেই হালকা করে দেখেন। কিন্তু যখন সেই জ্বালা শরীর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়, তখন তাকে 'সামান্য গ্যাস্ট্রিক' বলে উপেক্ষা করাটা নিজের শরীরের সঙ্গে অবিচার। গ্যাস্ট্রিক এককথায় শুধু অ্যাসিডের সমস্যা নয় এর সঙ্গে যুক্ত থাকে স্নায়বিক সাড়া, হরমোনাল ভারসাম্য, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি মানসিক চাপ।
শরীরের এই সতর্ক সংকেতগুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ করাই হোক সচেতনতার প্রথম ধাপ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।