কেন ওপেন সোর্স সফটওয়্যার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে? জানুন মূল কারণগুলো

কেন ওপেন সোর্স সফটওয়্যার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে? জানুন মূল কারণগুলো
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

কোড আর সফটওয়্যার শব্দ দুটি একসময় সীমিত গোষ্ঠীর কাছে বোঝার বিষয় ছিল। কিন্তু আজকের বিশ্বে, যখন মোবাইল অ্যাপ থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) পর্যন্ত সবকিছু প্রযুক্তি নির্ভর, তখন একটি শব্দ দিন দিন জোরালো হয়ে উঠছে: "ওপেন সোর্স সফটওয়্যার"।

এই সফটওয়্যারগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এসবের source code সবার জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ, আপনি শুধু ব্যবহারই করতে পারবেন না, চাইলে তার কাঠামো দেখে পরিবর্তনও করতে পারবেন।

এই মুক্ততাই ওপেন সোর্সকে তৈরি করেছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তির চালিকা শক্তি।
 

ওপেন সোর্সের কী?

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এমন এক সফটওয়্যার ব্যবস্থা, যার কোড যেকোনো ব্যক্তি পড়তে, পরিবর্তন করতে এবং নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন। এতে পেটেন্ট বা মালিকানা-নির্ভর সীমাবদ্ধতা থাকে না।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়:

⇨  (অপারেটিং সিস্টেম),

⇨ Apache (ওয়েব সার্ভার),

⇨ Python, PHP, JavaScript (প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও লাইব্রেরি),

⇨WordPress (ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট)।
 

ওপেন সোর্স দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠার কারণ :

১. স্বাধীনতা ও কাস্টমাইজেশনের সুবিধা

প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তাদের প্রয়োজন অনুসারে সফটওয়্যার সম্পাদনা করতে পারে। ফলে নিয়ন্ত্রণ থাকে নিজের হাতে যা ক্লোজড সফটওয়্যারে অসম্ভব।
 

২. কম খরচে প্রযুক্তি গ্রহণ

অধিকাংশ ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ফ্রি হওয়ায় নতুন উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী কিংবা ছোট ব্যবসাগুলো প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধাহীন সুযোগ পায়।
 

৩. গ্লোবাল কমিউনিটি সাপোর্ট

এই সফটওয়্যারগুলোর উন্নয়নে অংশ নেয় বিশ্বের হাজার হাজার ডেভেলপার। এদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফটওয়্যার হয় বেশি স্থিতিশীল, বাগমুক্ত এবং আপডেটেড।
 

৪. স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা

যেহেতু কোড উন্মুক্ত, তাই নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি অনেক দ্রুত ধরা পড়ে এবং দ্রুত সমাধান সম্ভব হয়। এটি অনেক সময় বদ্ধ সফটওয়্যারের চেয়ে বেশি নিরাপদ প্রমাণিত হয়।
 

৫. Vendor Lock-in থেকে মুক্তি

কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির উপর নির্ভরতা না থাকায় প্রতিষ্ঠান নিজের কাঠামো ও প্রয়োজন অনুযায়ী সফটওয়্যার ব্যবহারে স্বাধীনতা পায়।

Google, Microsoft, Facebook সহ প্রযুক্তি জায়ান্টদের অধিকাংশ প্রযুক্তির ভিত্তি আজ ওপেন সোর্সেই তৈরি।
NASA, CERN-এর মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও ওপেন সোর্সের ওপর নির্ভর করে।

এমনকি Android, বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম—এটিও ওপেন সোর্স ভিত্তিক।

নতুন প্রোগ্রামারদের জন্য ওপেন সোর্স এক বাস্তব 'লার্নিং ল্যাব'। কোড শেখা, প্রকল্পে অবদান রাখা, বাস্তব জ্ঞান অর্জন সবই হয় ওপেন সোর্সে সরাসরি কাজ করার মাধ্যমে। এতে শুধু দক্ষতা বাড়ে না, ভবিষ্যতের চাকরির বাজারেও বড় সুযোগ তৈরি হয়।
 

কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে:

⇨ সবসময় ডকুমেন্টেশন যথেষ্ট থাকে না

⇨ নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের অভাব

⇨ নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যবহার জটিল হতে পারে
 

তবে এগুলোর মোকাবিলায় সম্প্রদায় নিরন্তর কাজ করছে যার ফলে ওপেন সোর্স দিন দিন আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে।

ওপেন সোর্স এখন শুধু সফটওয়্যার নয় একটি চিন্তাধারা। এটি প্রযুক্তিকে মুনাফার চেয়ে সবার জন্য মুক্ত ও সহজলভ্য করার আন্দোলন, যেখানে জ্ঞান ভাগাভাগি হয়, উদ্ভাবন সম্মিলিত হয় সেখানেই ভবিষ্যৎ। ওপেন সোর্স সেই ভবিষ্যতেরই পথপ্রদর্শক।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ